ভেষজ জগতে কালোজিরা একটি পরিচিত নাম। আমাদের ইসলাম ধর্মেও কালোজিরার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কালোজিরা কালঞ্জি নাইগেল্লা সাটিভা উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত নাইগেল্লা বীজ একটি সাধারণ নাম। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, মিউকোলাইটিক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ডায়াবেটিক হিসাবে কাজ করে। আজকের এই লিখায় কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সকলেরই কালোজিরা নিয়ম করে খাওয়া উচিত, কারণ এটি পেটে ক্রিয়াকলাপের উন্নতির জন্যও আলোচিত । এটি ক্ষুধা বাড়াতে সাহায্য করে এবং অন্ত্রের গ্যাসটিকের সমস্যার উপশম করে । সুতরাং, এটি একটি পাচক এবং carminative এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। আসলে কালোজিরার উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবেনা। এর মধ্যে রয়েছে ডায়াবেটিস মেলিটাস, চুলের বৃদ্ধি, অস্টিওআর্থারাইটিস, ক্যান্সার, লিভার এবং কিডনি রোগ, হাঁপানি ইত্যাদি রোগের জন্য ভাল। আয়ুর্বেদে, এটি খারাপ শ্বাস, উত্পাদনশীল কাশি, হাঁপানি, চর্মরোগ, চুল পড়া এবং মাঝে মাঝে জ্বরের জন্য ব্যবহৃত হয়।
কালোজিরার এত গুন , সুতরাং আমাদের অবশ্যই কালিজিরা খাওয়া বা ব্যবহার করা উচিত। কালোজিরা কি?
কালোজিরা নাইগেল্লা সাটিভা উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত বীজের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী নাম। এটি সাধারণত কালো জিরা এবং নিগেলা বীজ হিসাবে পরিচিত। এটি রানুনকুলেস বা বাটারক্যাপস ফ্যামিলি এবং Nigella L. genus এর অন্তর্গত।
কালোজিরার বিভিন্ন নাম
নাইগেল্লা বীজ, কালো বীজ, কালো জিরা বা কালিজিরা নামে এটি সাধারণত পরিচিত। এর বোটানিক্যাল নাম হল নাইগেল্লা সাটিভা, এছাড়াও জিরা noir হিসাবে পরিচিত, অনেকে আবার মৌরি ফুল, ছোট মৌরি হিসেবে ও বলে থাকে।
কালোজিরার কার্যকারী অংশ
কালোজিরার কার্যকরী অংশ হল, বীজ, বীজ তেল। এর বীজ এবং বীজ তেল ভোজ্য অংশ যা ঐতিহ্যগত রন্ধনপ্রণালীতে ব্যবহৃত হয়। এটি একটি ফ্লেভারিং এজেন্ট হিসাবে আচার মধ্যে ব্যবহার করা হয়। কালোজিরার তেল অনেক বিখ্যাত।
কালোজিরার উপকারিতা
কালোজিরা একটি মহা কার্যকরী ভেষজ উপাদান। এটি আমাদের বিভিন্ন ভাবে উপকার করে, এর কিছু গুণাবলী আছে যা আমদের নিম্নোক্ত কাজ গুলি করতে সহায়তা করে।
- ওজন কমানো
- আমরা বুঝতে পারি যে কালজিরা প্রধানত স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল, উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড বা ডিসলিপিডেমিয়ার মতো চর্বিজনিত ব্যাধিতে উপকারী হয়ে থাকে। এটি প্রধানত পেট, ফুসফুস এবং এয়ারওয়েজ, জরায়ু, ত্বক, চুল, লিভার এবং কিডনিতে তাদের ক্রিয়া ভাল করার জন্য কাজ করে।
- ডিসলিপিডেমিয়া প্রতিরোধ করা।
- দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস নির্মূল করা।
- আয়ুর্বেদ দুর্গন্ধযুক্ত শ্বাস নির্মূল করার জন্য কালজিরা ব্যবহার করার পরামর্শ দেয়। এটিতে anti halitosis ক্রিয়া আছে। এটি বেশ কয়েকটি ব্যাকটিরিয়াকে হত্যা করে এবং তাদের বৃদ্ধি বন্ধ করে দেয়, যা হ্যালিটোসিসের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করে।
- দুর্গন্ধের জন্য, আধা চা চামচ কালোজিরা নিন এবং দিনে ২ বার নিয়ম করে তা চিবান। এই কাজটি আপনি মাসভরে করতে পারেন, আশা করি উপকার পাবেন।
- অ্যানোরেক্সিয়া প্রতিরোধ করা।
- বদহজম প্রতিরোধ করা।
- পেট ফাঁপা কমানো।
- আপনি যদি খাবার খাওয়ার পূর্বে আধা চা চামচ কালো জিরা চিবিয়ে নেন, তাহলে আপনার পেট ফাঁপা আস্তে আস্তে কমে যাবে।
- ডায়রিয়া নির্মূল করা।
- খিটখিটে মেজাজ প্রতিরোধ করা।
- কাশি এবং হাঁপানি নির্মূল করা।
- কালোজিরার সাথে তুলসি পাতার রস মিশিয়ে খেলে কাশি বা হাঁপানির আরাম হয়।
- কালো জিরা এন্টি-হাঁপানি, antitussive, mucolytic এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্য আছে। এই ক্রিয়াগুলি সরাসরি এয়ারওয়েজ এবং ফুসফুসে প্রদর্শিত হয়। এটি এয়ারওয়েজের প্রদাহ হ্রাস করে এবং শ্লেষ্মা স্রাব নিয়ন্ত্রণ করে। যার মাধ্যমে কাশি এবং হাঁপানি সহজে নির্মূল হয়।
- বুকের দুধ সরবরাহ বৃদ্ধি করা।
- কালোনজির গ্যালাকটাগোগ অ্যাকশনও রয়েছে। এটি বুকের দুধের সরবরাহ বৃদ্ধি করে এবং বুকের দুধের অস্বাভাবিকতা হ্রাস করে। যাইহোক, কালোজিরা বুকের দুধের মধ্য দিয়ে গিয়ে শিশুকে হজমের উন্নতি করতে সহায়তা করতে পারে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, এটি শিশুদের মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণও হতে পারে। এই ধরনের ক্ষেত্রে, কালোজিরার ডোজ হ্রাস করুন এবং এটি সমপরিমাণ জিরা এবং গুড় দিয়ে নিন।
- জ্বরভাব কমানো।
- চুল পড়া কমায়।
- পেটের প্রদাহ দূর করে।
- ক্ষুধা উদ্দীপক, পাচক এবং কার্মিনেটিভ বৈশিষ্ট্যের কারণে, কালনজি অ্যানোরেক্সিয়া, বদহজম এবং পেট ফাঁপা রোধে সহায়তা করে। এটি পাচক রসের নিঃসরণকে উন্নত করে এবং লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে, যা শেষ পর্যন্ত ক্ষুধা বাড়াতে সহায়তা করে। বদহজমের ক্ষেত্রেও একই রকম প্রক্রিয়া দেখা যায়।
- স্নায়বিক রোগ প্রতিরোধ করে।
- জন্ডিস প্রতিরোধ করে।
- মাথা ব্যথা কমায়।
- কালোজিরা এত উপকারী এবং এত বেশি সহজলভ্য যে আপনি যে কোন সময় চাইলে কালোজিরা ব্যবহার করতে পারেন, এটি আপনি চাইল তেল হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন বা বিভিন্নভাবে তা খেতে পারেন। আপনি যদি চুলে কালিজিরার তেল লাগান তাহলে আপনার চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে তা ব্যবহার করার থেকে যদি আপনি খান তাহলে বেশি কার্যকরী হবে।
আসুন জেনে নেওয়া যাক কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম।
কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম
আপনি চাইলে কালোজিরা বিভিন্নভাবে খেতে পারেন, যেমনঃ
কালোজিরার তেল
আপনি চাইলে কালোজিরার তেল বানিয়ে নিতে পারেন। আজকাল দোকানে কালোজিরার তেল পাওয়া যায়। কালোজিরারা তেল বানানো তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। আপনি কালিজিরা ভাল মত ধুয়ে তাতে হালকা তেল মিশিয়ে ঘানিতে ভাঙ্গালেই আপনি পেয়ে যাবেন কালিজিরা তেল, এই তেল আপনি রান্নার কাজে, বা চানাচুর মুড়ি মাখিয়ে ও খেতে পারেন। কালিজিরার তেল আসলে সবসময় ব্যবহার করা যায়।
কালোজিরার গুঁড়া
আপনি চাইলে কালোজিরার গুঁড়া করে মশলা হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যেমন হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া , বা ধনিয়া গুঁড়া তরকারীতে ব্যবহার করেন, ঠিক তেমনি কালোজারার গুঁড়া তরকারীতে দিতে পারেন, এতে আলাদা একটি ফ্লেভার পাবেন, তা আপনার রান্নাকে আরও সুস্বাদু করবেন। তাছাড়া কালিজিরার গুঁড়া রেমেডির সাথে মিলিয়ে ও খেতে পারেন। অনেকে ওজন কমানোর জন্য এভাবে কালিজিরার গুঁড়া খেয়ে থাকেন।
কালোজিরার মধু
কালিজিরার মধু খুবই উপকারী। এই মধু যাদের ঠাণ্ডা বা হাঁপানির সমস্যা আছে তাদের জন্য খুবই উপকারী। এই মধু আপনি নিয়ম করে গরম পানির সাথে বা খালি খালি খেতে পারেন, তবে রাতে শোয়ার আগে আপনি যদি এই মধু খান তাহলে বেশি উপকার পারেন, আপনার কাশির সমস্যা থাকে এই মধু খেলে আপনার কাশি তাড়াতাড়ি কমে যাবে।
কালোজিরার ভর্তা
কালিজিরার ভর্তা বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত পদ। এই কালিজিরারা ভর্তা খেতে যেমন সুস্বাদু তেমনি উপকারী। আপনার খুব বেশি ঠাণ্ডা লেগেছে আপনি যদি একটু কষ্ট করে কালিজিরার ভর্তা বানিয়ে খান, তাহলে দুইদিনের মধ্যেই আপনার ঠাণ্ডার সমস্যা কমে যাবে আপনি আরাম পাবেন, এমনকি ডাক্তাররাও কালিজিরার ভর্তা খেতে বলে থাকে। গরম ভাত দিয়ে কালিজিরার ভর্তা খুবই মজাদার এবং লোভনীয় খাবার।
কালোজিরা বীজ
আপনি চাইলে পুরো কালিজিরার দানাকে ও খেতে পারেন। অনেকে করেন কি কালিজিরা ভিজিয়ে রাখেন তারপর সে পানি খান, এটি পেটের জন্য খুবই উপকারী। এই কালিজিরার পানি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা এবং পেটের প্রদাহ দুর করে। তার সাথে ডিহাইড্রেশনের সমস্যা ও দূর করে।
অনেকেই আছেন আস্ত কালিজিরা রুটি বা তরকারীতে দিয়ে থাকেন, সেভাবে খাওয়াও উপকারী, আপনি চাইলে মুখরোচক খাবার যেমন, লুচি, আচার এগুলোতেও কালিজিরা দিতে পারেন।
কালোজিরার ক্যাপসুল
এখন অনেক ধরনের কালিজিরার ক্যাপসুল পাওয়া যায়, যারা কর্মজীবী মানুষ এবং যাদের কালিজিরার তেল,মধু কিংবা আচার খাওয়ার সময় নেই, তাদের জন্য কালিজিরার ক্যাপসুল তৈরি করা হয়েছে।আপনি এই ক্যাপসুল প্রতিদিন সকালে নাস্তা খাওয়ার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে এই ক্যাপসুল নিতে পারেন। এতে আপনি উপকার পাবেন।
শেষ কথা
আশা করি, আজকের এই লিখা পড়ে কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে ভাল মত বুঝতে পেরেছেন, এখন আপনার সুবিধামত উপায়ে আপনি কালোজিরার ডোজ নিন।
বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।