আমরা ছোট বেলা থেকেই ভিটামিন ই ক্যাপসুলের সাথে পরিচিত। প্রায়ই আমরা শুনি যে অমুক স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ১ থেকে ৫ বছরের বাচ্চাদের বিনা মূল্যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ানো হয়। শুধু মাত্র বাচ্চারাই যে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খায় তা কিন্তু না, বড়দের জন্য ও ভিটামিন ই ক্যাপসুল দরকার। আজকের এই লিখায় ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল কি?
ভিটামিন ই একটি চর্বিতে দ্রবণীয় পুষ্টি যা মানব দেহে একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে কাজ করে, যা দেহের কোষগুলিকে ক্ষতিকারক ফ্রি-রেডিকেল থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করে। ভিটামিন ই অনেক খাবারে পাওয়া যায়, সবাই চাইলে খুব সহজে ভিটামিন ই পেতে পারি।
ভিটামিন ই কে আরও বেশি করে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য ক্যাপসুল আকারে ও বের করা হয়েছে। ক্যাপসুলের ভিতরে পানীয় আকারে ভিটামিন ই থাকে। ক্যাপসুলটি দেখতে লাল রঙ্গের এলাচের মত।
মানুষ খাবার থেকে ভিটামিন ই নেওয়ার থেকে ক্যাপসুলের মাধ্যমে ভিটামিন ই নিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
আপনি চাইলে এটি খাবারের সাথে মিশিয়ে ও খেতে পারেন বা চাইলে ক্যাপসুল কেটে খালি খালি ও খেতে পারেন। বাচ্চাদেরকে খালি ই খাওয়ানো হয়।
যাইহোক, যদি আপনি বা আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারী মনে করেন যে আপনি পর্যাপ্ত ভিটামিন ই পাচ্ছেন না, তবে আপনার ডায়েটে শাকসবজি, অ্যাভোকাডোস, তেল এবং বাদামের মতো খাবার যুক্ত করার চেষ্টা করুন।
ভিটামিন ই ক্যাপসুলের প্রয়োজনীয়তা
ভিটামিন ই এর পরিপূরক হিসাবে ক্যাপসুল অনেক উপকারী। ক্যাপসুল সহজে বহন করা যায় এবং আপনি যেখানেই যান না কেন আপনি নিয়ম করে এটি নিতে পারেন। আপনি আপনার সুবিধা মত ২ ,৩ বা ৪ টি সহজেই নিতে পারেন। এছাড়া এই ক্যাপসুল আপনার দৈনিক ভিটামিন ই নেওয়ার পরিমাণ পরিমাপ করতে সহায়তা করে। তবে একজন মানুষ দৈনিক ৪০০ ইউনিট ভিটামিন ই নিতে পারে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল আপনি চাইলে খেতে পারেন বা কোন কিছুর সাথে মিশিয়ে ত্বক বা চুলে লাগাতে পারেন, আপনার যেভাবে সুবিধা হয়।
এখন ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল খাওয়ার নিয়ম
ভিটামিন ই ক্যাপসুল একটি লাল রঙ্গের এলাচি আকারের ২ সেন্টিমিটারের একটি থলে। এর ভেতরে তেল জাতীয় হলুদাভ একটি পদার্থ থাকে, যার স্বাদ কিছুটা নোনতা মিষ্টি। এটিকে ভিটামিন ই তেল ও বলা হয়। ভিটামিন ই ক্যাপসুলকে ভিটামিন ই এর সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ধরা হয়।
আপনি বিভিন্নভাবে ভিটামিন ই ক্যাপসুল খেতে পারেন। ভিটামিন ই আপনার ত্বক এবং চুলের জন্য খুবই উপকারি। আর এটি যেহেতু চর্বিতে দ্রবণীয় ফ্যাট সেহেতু এটি ত্বকে এক্সট্রা নরিশিং আবরণ তৈরি করে যার ফলে ত্বক উজ্জ্বল আর কোমল হয়।
আপনি দিনে ১৫ মিলিগ্রাম মানে ৪০ ইউনিট পর্যন্ত ভিটামিন ই নিতে পারেন। অ্যামেরিকান হার্ট এ্যাসোসিয়েশন এর মতে, ভিটামিন ই ক্যাপসুল ডিরেক্ট খাওয়ার থেকে খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া ভাল।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল সরাসরি খাওয়া
আপনি চাইলে সকালে এবং রাতে খাওয়ার পরে ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিতে পারেন, আপনি একটি কাঁচি দিয়ে ক্যাপসুলের মাথা কেটে নিন, তারপর সেটি কে হালকা চাপ দিয়ে ভেতরে থাকা লিকুইডটি মুখে ঢেলে দিন। আপনি মুখে দেওয়ার পর হালকা নোনতা মিষ্টি ভাব অনুভব করবেন।
খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া
ভিটামিন ই জাতীয় খাবার খোঁজার থেকে আপনি যদি যে কোন খাবারের সাথে সাপ্লিমেন্টারি ক্যাপসুলের ভিটামিন ই মিশিয়ে নিতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রে মিষ্টি খাবারের সাথে না মিশিয়ে ঝাল খাবারের সাথে মিশানো ভাল তাতে স্বাদ ঠিক থাকে। সব চেয়ে ভাল হয় খাবার তৈরির পর সে গরম খাবারের উপর ছড়িয়ে দিলে। অনেকে করেন কি খাবার রান্নার জন্য যখন তেল দেয় তখন তাতে ক্যাপসুলের ওয়েল মিশিয়ে দেয়, না এটি করবেন না, কারণ তাপে সেই ক্যাপসুলের ভিটামিন ই র কার্যকারিতা কমে যায় , এটি যেহেতু সাপ্লিমেন্ট সেহেতু এটিতে ভিটামিন ই অতটা জমাট বাধা থাকে না। তাই তেলে দেওয়ার সাথে সাথে বা গরম কিছুর সাথে দেওয়ার সাথে সেটি উবে যায়, আপনি ঠিকমত ভিটামিন ই আপনার দেহের জন্য শোষণ করতে পারবেন না।
ভিটামিন ই ক্যাপসুলের ভিটামিন ই আগুনের তাপে তার উপযোগিতা হারায়।
যদি একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল গ্রহণ করা হয় তবে দিনের মাঝামাঝি সময়ে এটি খাবারের সাথে নিয়ে নিতে পারেন। আপনি চাইলে ভিটামিন এ এবং সি জাতীয় খাবারের সাথে নিতে পারেন, কিন্তু আইরন জাতীয় খাবারের সাথে নিবেন না, এতে গ্যাসটিকের সমস্যা হতে পারে।
ভিটামিন ই আসলে উচ্চমাত্রায় রক্ত চাপ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
কি পরিমাণে ভিটামিন ই ক্যাপসুল নেওয়া যেতে পারে?
ভিটামিন ই এর একটি ক্যাপসুলে ১০০, ২০০ বা ৪০০ মিলিগ্রামের মত পদার্থ রয়েছে যাকে বলে টোকোফেরল। আপনি চাইলে খাওয়ার সময় ভিটামিন ই গ্রহণ করতে পারেন, তবে অবশ্যই খাওয়ার আগে ক্যাপসুলটি পানিতে একটু ধুয়ে নিবেন ।
Avitaminosis এর সঙ্গে, দৈনিক ডোজ ১০০ মিলিগ্রাম হয়, কিছু ক্ষেত্রে, এটি ৮০০ মিলিগ্রাম অবধি বৃদ্ধি করা যেতে পারে, সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের সুপারিশ থাকতে হবে।
গর্ভাবস্থার ত্রৈমাসিকে জন্মগত অসঙ্গতি এবং ভ্রূণ বিকাশের প্যাথলজিগুলির সাথে, ১০০-২০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই দিনে একবার গ্রহণ করা হয়। রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসে, ক্যাপসুলে ভিটামিন ই প্রতিদিন ১০০-৩০০ মিলিগ্রামে কয়েক সপ্তাহের জন্য গ্রহণ করা হয়। নিউরোমাসকুলার সিস্টেম, জয়েন্ট এবং টেন্ডনের রোগগুলিতে, সেইসাথে পেশীবহুল ডিস্ট্রোফিজগুলিতে, ১০০ মিলিগ্রাম ১-২ বার দিনে ১-২ মাসের জন্য নির্ধারিত হয়। এই ক্ষেত্রে, ২-৩ মাস পরে থেরাপির একটি দ্বিতীয় কোর্স শুরু করা উচিত।
নিউরাস্থেনিক রোগের ক্ষেত্রে, ১০০ মিলিগ্রামের ডোজে ভিটামিন ই ১.৫-২ মাসের জন্য দিনে একবার গ্রহণ করা হয়। এন্ডোক্রাইন রোগের চিকিৎসা করার সময়, দৈনিক ডোজ ৩০০-৫০০ মিলিগ্রাম হয়। অ্যালিমেন্টারি অ্যানিমিয়া এবং ক্রনিক হেপাটাইটিসের সাথে প্রতিদিন ৩০০ মিলিগ্রাম ভিটামিন ই গ্রহণ করে। periodontal রোগের জন্য, tocopherol দৈনিক ডোজ ২০০-৩০০ মিলিগ্রাম হয়।
শেষ কথা
আশা করি আজকের লিখা পড়ে ভিটামিন ই ক্যাপসুল নেওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। এখন থেকে আপনার জন্য প্রয়োজনীয় ডোজ আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, তা ও আর সঠিকতার জন্য আপনি ডাক্তারের সাথে আলোচনা করে নিতে পারেন।
বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। ওযু ভঙ্গের কারণ কয়টি বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।