জাফরান আয়ুর্বেদে খুবই পরিচিত নাম। এটি খুবই দুর্লভ একটি ভেষজ উদ্ভিদ। জাফরান একটি স্পন্দনশীল লাল মশলা যা উদ্ভিদ জাফরান ক্রোকাস (Crocus sativus) থেকে আসে। এটি ফুলের শুকনো স্টিগ্মা দিয়ে তৈরি। জাফরানকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাত করে ব্যবহার করা হয়। আজকের এই লেখায় জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে।
জাফরান কি?
জাফরান কেশর নামে পরিচিত। Zafraan ফুলের থ্রেড-মত অংশ অনেক স্বাস্থ্য এবং ঔষধি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। জাফরান বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল মশলাগুলির মধ্যে একটি কারণ এর প্রক্রিয়াকরণের সর্বাধিক কাজটি হাতের মাধ্যমে করা হয়। জাফরান একটি অত্যন্ত মূল্যবান মশলা কারণ তার স্বতন্ত্র স্বাদ, স্বাস্থ্য, এবং ঔষধি বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
ধারণা করা হয়, এই উদ্ভিদের উৎপত্তি গ্রীসে। বর্তমানে ইরান, স্পেন ও চীনসহ অনেক দেশে এটি চাষ করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে, জাফরান রঙ এবং স্বাদযুক্ত খাবারে ব্যবহার করা হয়। এটি পিঠে ব্যথা, ক্ষত এবং ফোড়ার মতো অসুস্থতার জন্য ভেষজ প্রতিকার হিসাবেও ব্যবহৃত হয়।
জাফরান তার অনন্য স্বাদের কারণে বিশ্বব্যাপী অনেক রন্ধনসম্পর্কীয় রেসিপিতে ব্যবহার করা হয় যা picrocrocin এবং safranal হিসাবে রাসায়নিক যৌগের উপস্থিতির কারণে ঘটেছে। এই ভেষজ উদ্ভিদটি হাঁপানি, কাশি এবং ঠান্ডা, পেটের অসুস্থতা, অনিদ্রা, জরায়ুর রক্তপাত, ক্যান্সার, আল্জ্হেইমের রোগ, বন্ধ্যাত্ব, বিষণ্নতা, কোলেস্টেরল, পেট ফাঁপা ইত্যাদির মতো রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
জাফরান প্রসাধনী শিল্পে একটি মূল্যবান উপাদান। অনেক লোক দাবি করে যে জাফরান প্রদাহ এবং ব্রণ সহ সাধারণ ত্বকের সমস্যাগুলি থেকে মুক্তি দিতে পারে। জাফরানের প্রসাধনের মধ্যে জাফরানের তেল একটি অনন্য উপাদান। এটি মুলত চুলের বৃদ্ধির জন্য অনেক উপকারী।
জাফরান তেল তৈরি করার জন্য আপনার কোন সরঞ্জাম প্রয়োজন হবে?
- সসপ্যান – একটি সসপ্যানে জাফরান দিয়ে তেল সিদ্ধ করুন।
- ল্যাডল – ল্যাডলের সাহায্যে ঘন ঘন নাড়তে থাকুন।
- এয়ারটাইট কন্টেইনার – একটি এয়ারটাইট পাত্রে জাফরান তেল ঢেলে দিন।
- জাফরান তেল তৈরি করতে আপনার কী কী উপাদান প্রয়োজন হবে?
- গরম পানি – জাফরান তেল প্রস্তুত করতে পানি গরম করুন।
- জাফরান থ্রেড – এক চা চামচ জাফরান থ্রেড নিতে হবে।
- বাদাম তেল বা জলপাই তেল – আপনি চাইলে এক টেবিল চামচ জলপাই তেল বা বাদাম তেল জাফরান তেল তৈরির সময় মিক্স করুন, এতে সুন্দর টেক্সচার তৈরি হবে।
জাফরান তেল দেখতে এবং স্বাদ কেমন হবে?
জাফরান তে্লের স্বাদ মিষ্টি ফুলের ফ্লেভারের মত সাথে একটি জটিল nuanced স্বাদ প্রাকৃতিক স্বাদ আছে। টেক্সচারটি মসৃণ এবং পরিষ্কার হবে।
নির্দেশাবলী
- একটি সসপ্যান নিন এবং মাঝারি আঁচে পানি এবং বাদাম তেল সিদ্ধ করুন।
- তারপরে, চূর্ণবিচূর্ণ জাফরান থ্রেডগুলি যোগ করুন এবং এটি ১৫ মিনিটের জন্য ফুটতে দিন।
- ঘন ঘন নাড়তে থাকুন এবং স্বাদগুলি তেল দিয়ে প্রস্ফুটিত হতে দিন।
- তেলের রং পরিবর্তন হয়ে গেলে আঁচ বন্ধ করে এয়ারটাইট পাত্রে তেল ঢেলে দিন।
- সঠিকভাবে সিল করার পরে, এটি প্রায় এক সপ্তাহের জন্য একটি শীতল এবং অন্ধকার জায়গায় রেখে দিতে হবে এর নির্যাস টা সুন্দরভাবে মেশার জন্য।
- এক সপ্তাহ পর দেখুন, জাফরান তেল ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছে।
জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম
জাফরানের তেল চুলের জন্য খুব ভাল। মাথার ত্বকে জাফরানের প্রয়োগ টাক (অ্যালোপেসিয়া) চিকিত্সার জন্য ভাল। জাফরান, দুধ এবং লিকোরিসের মিশ্রণ, যখন মাথার ত্বকে প্রয়োগ করা হয়, তখন চুল পড়া এবং চুলের বৃদ্ধি প্রতিরোধে ভাল। অ্যাপ্লিকেশনটি চুলের বৃদ্ধিকে উদ্দীপিত করতেও সহায়ক।
- বাজারে জাফরান তেল কিনতে পাওয়া যায়। তাছাড়া আপনি চাইলে বাজার থেকে জাফরান কিনে এনে বাসায় তেল বানাতে পারেন।
- বাসায় তেল বানাতে হলে নারকেল তেলের সাথে জাফরান মিশিয়ে চুলায় হালকা আঁচে জ্বাল দিতে হবে, কারণ এতে করে জাফরানের নির্যাস ভালভাবে মিশে।
- এছাড়া জাফরানের তেল গরম করে গায়ে মালিশ করলে গায়ের ব্যথায় আরাম পাওয়া যায়।
- প্রদাহ, যা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দ্বারা সৃষ্ট হতে পারে, যা অনেক রোগের মূল। এর মধ্যে ত্বকের সাথে জড়িত প্রদাহজনক অবস্থার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ক্রোসিনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যগুলি এই অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করতে পারে। এক্ষেত্রে জাফরানের তেল মালিশ করা খুবই উপকারী।
জাফরানের তেল ব্যবহারের নিয়ম নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলঃ
- যদি আপনি মাথায় জাফরানের তেল মালিশ করতে চান তাহলে আপনি তেল হাতে নিয়ে মাথায় আলতোভাবে মালিশ করতে হবে, আপনার চুলের ভাঁজে ভাঁজে আলতো ভাবে মালিশ করতে হবে।
- আপনি যদি গায়ে জাফরানের তেল মালিশ করতে চান তাহলে প্রথমে তেলটি হালকা গরম করতে হবে, তারপর আস্তে আস্তে গায়ে মালিশ করতে হবে, এতে গায়ের ব্যথার আরাম হয়।
- জাফরান তেল চুলের পাশাপাশি ত্বকের জন্য ব্যাপক ভাবে উপকারী।
- অনেকে দাবি করেন যে জাফরান ত্বককে হাইড্রেট এবং ময়শ্চারাইজ করতে পারে।এক্ষেত্রে আপনি অল্প করে জাফরান তেল নিয়ে আপনার মুখে মালিশ করতে পারেন, এতে করে আপনার স্কিন নরম আর মোলায়েম হবে।
আপনি চাইলে আরেকটি কাজ করতে পারেন। একটি ময়েশ্চারাইজার তৈরি করতে বেস অয়েলে জাফরান তেল যোগ করা যেতে পারে। একটি ১-আউন্স বোতল প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ একটি ক্যারিয়ার তেল, যেমন বাদাম তেল বা আঙ্গুরবীজ তেল দিয়ে পূর্ণ পূরণ করুন। ৩ থেকে ৫ ফোঁটা জাফরান এসেনশিয়াল অয়েল যোগ করুন। পরিষ্কার আঙ্গুল দিয়ে আপনার ত্বকে প্রয়োগ করুন। এতে আপনার স্কিন নরম হবে আর ক্লিন ও হবে, তারপর একটি টিস্যু দিয়ে মুছে নিন।
জাফরান তেল এর উপকারিতা
দাঁতব্যথার জন্য জাফরান তেল
জাফরান এবং মধু দিয়ে দাঁত মালিশ করা, মাড়ি থেকে ব্যথা উপশম করতে সাহায্য করে। মুখের টোনড অংশগুলি শিথিল করার জন্য এটি মধুর পাশাপাশি গ্লিসারিনের সাথেও প্রয়োগ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে জাফরানের তেলের সাথে গ্লিসারিন বা মধু মিক্স করে দাঁত মাজা যেতে পারে।
স্বাস্থ্যকর ঠোঁটের জন্য জাফরান তেল
জাফরান কয়েকটি উদ্ভিদ পণ্যগুলির মধ্যে একটি, যা ভিটামিন বি ২ (রাইবোফ্লাভিন) এর সবচেয়ে বড় উৎস। ভিটামিন বি ঠোঁটের জন্য খুবই উপকারী। আপনি চাইলে জাফরান তেল আলতোভাবে একটু চিনির সাথে মিক্স করে ঠোঁটে মালিশ করতে পারেন।
আপনি চাইলে জাফরানের তেল দিয়ে রান্না ও করতে পারেন, এর ইউনিক ফ্লেভার খাবারের স্বাদ বাড়ায়।
পেশীবহুল সমস্যার জন্য জাফরান তেল: জাফরান বয়স-সম্পর্কিত পেশীগত অবক্ষয় নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়। জাফরান কেবল অধঃপতন প্রক্রিয়াই হ্রাস করে না বরং ক্ষতিগ্রস্থ কোষগুলি নিরাময়ে সহায়তা করে।
স্নায়বিক সমস্যার জন্য জাফরান তেল: প্রাচীনকাল থেকে, জাফরান তার স্নায়বিক সুবিধার কারণে কপালে ব্যবহার করা হয় মানে জাফরান তেল কপালে মালিশ করতে পারেন।
তাহলে এর থেকে বোঝায়ই যাচ্ছে জাফরান কতটা উপকারী এবং দরকারি। তাহলে আজই বাজার থেকে জাফরান কিনে এনে তেল বানাতে পারেন।
তবে জাফরান তেল ছাড়া আপনি যদি এমনিতে জাফরান গুঁড়া ও রান্নার সময় তরকারিতে দেন তাহলে ও উপকার পাবেন, আপনি চাইলে আপনার রান্নার তেলের সাথে আলাদাভাবে জাফরান গুঁড়া মিশিয়ে নিয়ে রান্না করতে পারেন, এতে করে আপনি রান্নায় জাফরানি ফ্লেভার ও পাবেন এবং জাফরানের যে গুনাগুণ তা ও ভোগ করতে পারেন।
আসলে জাফরান তেল বা জাফরান খুবই সুন্দর এবং উপকারী ভেষজ উপাদান, যদি ও দাম একটু বেশি, তবে এটির গুনাগুণ পাওয়ার জন্য খুব বেশি পরিমাণ ব্যবহার ও করতে হয়না।
শেষ কথা
আজকের এই লেখার মাধ্যমে জাফরান তেল ব্যবহারের নিয়ম জানার পাশাপাশি জাফরান তেলের বহুমুখী উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন, তাহলে সম্ভব হলে আজই জাফরান তেল ব্যবহার করা শুরু করুন।
বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। সার্টিফিকেট সংশোধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।