চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা | পুষ্টি উপাদান

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

বর্তমানে মানুষ অনেক বেশি স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেছে। মানুষ এমন খাবার ই বেছে নেয় যা একসাথে পুষ্টি ও দিবে এবং সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এর মধ্যে চিয়া সিড একটি অন্যতম খাদ্য উপাদান। আজকের এই লিখায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

 

চিয়া সিড কি এবং এতে কি কি পুষ্টি উপাদান আছে?

 

চিয়া সিড  সালভিয়া হিস্পানিকা এল উদ্ভিদ থেকে উৎপাদিত ছোট কালো বা সাদা বীজ।  চিয়া সিডকে প্রায়শই “সুপারফুড” বা কার্যকরী খাদ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়। চিয়া সিডে কোলেস্টেরল হ্রাস এবং অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য পুষ্টি রয়েছে। এছাড়া চিয়া সিডে যা যা পুষ্টিমান রয়েছে। এইখানে DV হল daily value.

 

  • ক্যালোরি: ১৩৮
  • প্রোটিন: ৪.৭ গ্রাম
  • চর্বি: ৮.৭ গ্রাম
  • আলফা-লিনোলেনিক অ্যাসিড (এএলএ): ৫ গ্রাম
  • carbs: ১১.৯ গ্রাম
  • ফাইবার: ৯.৮ গ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: দৈনিক মূল্যের ১৪% (ডিভি)
  • আয়রন: ডিভির ১২%
  • ম্যাগনেসিয়াম: DV এর ২৩%
  • ফসফরাস: ডিভির ২০%
  • দস্তা: DV এর ১২%
  • ভিটামিন বি১ (থায়ামিন): ডিভির ১৫%
  • ভিটামিন বি ৩ (নিয়াসিন): ডিভির ১৬%

 

চিয়া সিডের উপকারিতা

 

চিয়া সিডের কিছু যাদুকরী উপকারিতা আপনাকে মুগ্ধ করবে, যেমনঃ

 

  • এটি উচ্চমানের পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ।
  • এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি চমৎকার উৎস
  • চিয়া সিডের মধ্যে থাকা ফাইবার এবং প্রোটিন ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • চিয়া সিডে  ফাইবার এবং ওমেগা -৩ এস বেশি থাকে, যা আপনার হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারে।
  • চিয়া সিডে বেশ কয়েকটি পুষ্টিগুণ রয়েছে যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে: ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম।
  • এটি রক্তে সুগারের লেভেল কমায়।
  • চিয়া সিড আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা সহজ। আপনি স্বাদ বৃদ্ধির জন্য চিয়া সিডের সাথে অনেক কিছু যোগ করতে পারেন।
  • এগুলি কাঁচা খাওয়া যেতে পারে, রসে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে, বা ওটমিল, পুডিং, স্মুদি এবং বেকড ফুডে যুক্ত করা যেতে পারে। আপনি এগুলি সিরিয়াল, দই, শাকসবজি বা ভাত জাতীয়  খাবারের উপরেও ছিটিয়ে দিতে পারেন।

 

আসুন জানা জাক, চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম।

 

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

 

চিয়া পানি

আপনার ডায়েটে চিয়া সিড অন্তর্ভুক্ত করার সবচেয়ে সহজ উপায়গুলির মধ্যে একটি হ’ল চিয়া পানি পান করা। চিয়া পানি তৈরি করতে ১/৪ কাপ (৪০ গ্রাম) চিয়া সিড  ৪ কাপ (১ লিটার) পানিতে ২০-৩০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। আপনি চিয়া পানীয়কে কিছু স্বাদ দেওয়ার জন্য, আপনি এতে কাটা ফল যুক্ত করতে পারেন যেমন, লেবু,বা কমলালেবু।

 

রস-ভেজানো চিয়া

আপনাকে শুধুমাত্র পানিতে চিয়া ভিজিয়ে পান করতে হবে এমন কিছু নয়। আপনি চাইলে ফলের রসে ভিজিয়ে ও চিয়া খেতে পারেন। চিয়ার জুস বানাতে  ৪ কাপ (১ লিটার) ফলের রসে ১/৪ কাপ (৪০ গ্রাম) চিয়া যোগ করতে হবে, এইভাবে মিনারেল এবং ফাইবারে পূর্ণ চিয়া জুস বানাতে পারবেন। তবে ফলের রসে ভিজানো চিয়া বেশি খাবেন না, কারণ ফলে অনেক চিনি থাকে।

 

চিয়া পুডিং

আপনি চাইলে  চিয়া পুডিং তৈরি করতে পারেন । একটি ঘন চিয়া পুডিং-তৈরি করতে এতে, বেশি করে চিয়া সিড মিশিয়ে তা অনেক ক্ষন ভিজিয়ে রাখুন। আপনি চাইলে এতে দুধ বা ফলের রস মেশাতে পারেন, সাথে ভ্যানিলা বা কোকো পাউডার মেশাতে পারেন। চিয়া পুডিং এই সুস্বাদু খাবারটি  প্রাতঃরাশের জন্য বা ডেজার্ট হিসাবে খাওয়া যেতে পারে।

 

চিয়া স্মুদি

আপনি যদি আপনার স্মুদিটিকে আরও পুষ্টিকর করে তুলতে চান তাহলে তাতে  চিয়া মেশাতে পারেন।

 

কাচা চিয়া

যদিও অনেকে চিয়া বীজ ভিজিয়ে রাখতে পছন্দ করেন তবে আপনি চাইলে তা কাঁচাও খেতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার স্মুদি বা ওটমিলে এগুলি গ্রাইন্ডিং করে শুকনো ছড়িয়ে দিতে পারেন।

 

চিয়া সিরিয়াল

প্রাতঃরাশের জন্য যদি আলাদা কিছু করার চেষ্টা করতে চাইলে আপনি চিয়া সিরয়াল বানাতে পারেন।,

 

এটি তৈরি করার জন্য, চিয়া সিড  দুধে  সারারাত ভিজিয়ে রাখুন এবং তাতে বাদাম, ফল বা দারুচিনির মতো মশলা ছিটিয়ে দিন। আপনি এটিকে আরও সুস্বাদু করার জন্য এতে ম্যাশড কলা এবং ভ্যানিলা নির্যাসও ব্যবহার করতে পারেন।

 

চিয়া ফ্রাই

আপনি যেমন চিকেন ফ্রাই বা ফ্রেঞ্চ ফ্রাই খান তেমনি চিয়া ফ্রাই করে খেতে পারেন, সাথে একটু গোল মরিচের গুঁড়া মিক্স করুন স্বাদের জন্য।

 

চিয়া সালাদ

চিয়া সিড আপনার সালাদে ছিটিয়ে দেওয়া যেতে পারে, মানে আপনি সাধারণত যেভাবে টমেটো বা শসা সালাদে দেন সেভাবে চাইলে চিয়া সালাদে দিতে পারেন।

 

চিয়া সালাদ ড্রেসিং

আপনি চাইলে চিয়া গুড়া সালাদের ড্রেসিং এ যোগ করতে পারেন, সাধারণত সালাদের ড্রেসিং এ চিনি দেওয়া হয়, আপনি এতে আলাদাভাবে চিয়া দিয়ে তাতে আলাদা টেক্সচার যোগ করতে পারেন।

 

চিয়া ব্রেড

আপনি ব্রেডের ডোতে ইষ্টের সাথে চিয়া গুঁড়া মিক্স করতে পারেন এতে আলাদা ফ্লেভার যোগ হয়।

 

চিয়া ক্রাম্ব

আমরা যেমন চিকেন ফ্রাই বা ফিস ফ্রাই করতে বা যে কোন ফ্রাই করতে ব্রেড ক্রাম্ব ইউজ করি ঠিক তেমনি চিয়া ক্রাম্ব ইউজ করতে পারি, এতে ফুড আর ও ক্রিস্পি হয়।

 

চিয়া কেক

কেকে সাধারণত ফ্যাট এবং চিনির পরিমাণ বেশি থাকে। যাইহোক, চিয়া সিড  কেকের পুষ্টিগুণ আরও উন্নত করতে সহায়তা করতে পারে। চিয়া কেক মিশ্রণে যুক্ত করলে এতে আলাদাভাবে  ফাইবার, প্রোটিন এবং ওমেগা -৩ যুক্ত হয়।

 

প্যান কেক

প্যান কেকের মিশ্রণে ডিম আর ময়দার সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে নিতে পারেন, এতে প্যান কেকে অন্যরকম ফ্লেভার যোগ হবে।

 

চিয়া জ্যাম

চিয়া সিড তাদের  ওজনের ১০ গুণ পানি শোষণ করতে পারে, যা জ্যামে পেকটিন হিসেবে দুর্দান্তভাবে কাজ করে। পেকটিন সাধারণত তিতা হয়, তাই চিয়া বীজের পেকটিন প্রতিস্থাপন করা হলে  আপনার জ্যামটিতে মিষ্টি স্বাদ তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে চিনি যুক্ত করার প্রয়োজন হবে না।

 

কুকিজ

আপনি যদি কুকিজ পছন্দ করেন তাহলে তার মিশ্রণে চিয়ার গুঁড়া মিশাতে পারেন, তারপর ওভেনে দিয়ে বেক করুন, তাহলে হয়ে গেল চিয়া কুকিজ।

 

চিয়া সুপ বা গ্রেভি

অনেকেই আছেন যে সুপে রসুন তেল দিয়ে সিজলিং দিয়ে থাকেন, চাইলে তারা চিয়া দিয়ে ও সিজলিং দিতে পারেন, এর জন্য আপনাকে চিয়া হালকা তেলে হালকাভাবে ভেঁজে নিতে হবে, তারপর সুপে ছড়িয়ে দিতে হবে, এতে সুপে অন্যরকম ফ্লেভার যোগ হয়।

 

চিয়ার অমলেট

আমরা যেমন ডিমের অমলেট খাই তেমন চিয়ার অমলেট ও আছে,  আপনি ডিমের সাথে চিয়ার ফ্লেক্স যুক্ত করে চিয়ার অমলেট বানাতে পারেন।

 

চিয়া ওট্মিল

চিয়া ওট্মিল প্রস্তুত করতে হলে প্রথমে ওট্মিল বানিয়ে তাতে চিয়া সিড যুক্ত করে দিলেই হবে, যেভাবে আমরা কোনকিছুতে দারুচিনির গুঁড়া মিশাই।

 

চিয়া দই

আপনি শুধু নরমাল দইয়ের উপর হালকাভাবে চিয়ার গুঁড়া ছড়িয়ে দিন তাহলেই হবে, আমরা যেমন ফল মিক্স করি ঠিক সেভাবেই চিয়ার গুঁড়া দইয়ের সাথে মিক্স করতে পারি।

 

চিয়ার বার্গার

বার্গারে যে কাবাব বানানো হয় আপনি চাইলে তাতে চিয়া গুড়া ভাঁজা মিক্স করতে পারেন, এতে কাবাবটি আরও বেশি ক্রিস্পি এবং জুসি হয়।

 

চিয়া পিৎজা

চিয়া পিৎজা বানানো খুব সহজ, আপনি শুধু পিৎজার ডো টা সেট করে অন্যান্য উপকরণের সাথে চিয়া সিডের ফ্যাক্স ছড়িয়ে দিন, যেভাবে ওরিগানো মিশানো হয় ঠিক সেভাবেই।

 

শেষ কথা

চিয়া সিড যে শুধুমাত্র  খনিজ, ওমেগা -৩ চর্বি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার সমৃদ্ধ তাই ই নয়, এটি প্রস্তুত করাও সহজ।

 

গবেষণায় দেখা গেছে যে এটির বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা রয়েছে, ওজন হ্রাস থেকে শুরু করে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করা পর্যন্ত। আজকের এই লিখায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিত জানলেন, এখন আপনি আপনার পছন্দমত চিয়া আইটেম তৈরি করে আপনার টেবিলে পরিবেশন করুন।

 

বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। দাবা খেলার নিয়ম ও কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *