আমরা সবাই জানি যে রমজান মাস এসে গেছে। অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসকে পবিত্র মাস হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, তিনি এই রমজান মাসের পুরষ্কারই শুধু নিজের হাতে দেবেন। রমজান মাসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল তারাবির নামাজ। অতএব, তারাবির নামাজ পড়ার জন্য, প্রতিটি মুসলিমকে তারাবির প্রার্থনা, তারাবির মোনাজাত তারাবির উদ্দেশ্য জানতে হবে।
আপনাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছেন যারা তারাবির নামাজ আদায় করার নিয়ম জানেন না। যাইহোক, তাদের জন্য, আমাদের এই পোস্টটি খুব সাবধানে পড়া জরুরি। কারণ এই পোস্টে তারাবির নামাজের নিয়ম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
তারাবির নামাজ কি?
অনেক মুসলমানই জানে না তারাবির নামাজ কি। যাইহোক, যারা জানেন না তাদেরকে জানানোর জন্যই আজকের এই লিখা।
রমজান মাসে তারাবির নামাজ আদায় করতে হয়, এটা নামাজ পড়া সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তারাবির নামাজ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য একটি অতি পরিচিত নামাজ। যেসব মুসলিমরা তারাবি পড়েন তারা এশার নামাজের পাশাপাশি তারাবির নামাজও আদায় করেন।
তারাবির নামাজ ২০ রাকাত সুন্নত-ই মুক্কাদা সালাত নামাজ (প্রাপ্তবয়স্ক) পুরুষ ও মহিলা উভয়েই রমজান মাসে দশটি সালামসহ-ইশার নামাজের পরে আদায় করে থাকেন। প্রতি চার রাকাতের পর একটু বসে দোয়া করা মুস্তাহাব।
হযরত উমর (রাঃ) তার খিলাফতের সময় তারাবির নামাজ মুসলমানমণ্ডলীর জন্য আদেশ দিয়েছিলেন।
ইশা সালাত/নামাজ পড়ার আগে কোনও ব্যক্তি তারাবির নামাজ আদায় করতে পারবেন না। তারাবির নামাজ ইশার নমাজের শেষ সুন্নাতের পরে এবং বেতের নামাজের আগে আদায় করা হয়ে থাকে। যাইহোক, বেতের নামাজের আগে এই তারাবি আদায় করা যায়। আর এই নামাজ পড়ার সময় ফজরের ওয়াক্ত হওয়া আগ অবধি থাকে। ফজরের ওয়াক্ত হয়ে গেলে এই নামাজ আর পড়া যায়না। এই নামাজ কাজা করে পড়া যায়না।
তারাবির নামাজের ফজিলত
জামাতে তারাবির সালাত/নামাজ আদায় করা সুন্নাত-ই-কিফায়াহ। কেউ যদি বাড়িতে একা তারাবি সালাত/নামাজ আদায় করে, তবে সে মসজিদে জামাতের সদ্গুণ ও আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে। যারা ‘জামাতে ইশার নমাজ’ করেননি তারা জামাতে তারাবির সালাত/নামাজ আদায় করতে পারবেন না। এই নামাজ আদায়ের মাধ্যমে মুসলিমরা তাদের পূর্ববর্তী পাপের জন্য আল্লাহর কাছে মাফ চায়।
তারাবির নামাজের নিয়ম
মুসলমানদের মধ্যে সাধারণত দুই ধরনের মানুষ থাকে। উদাহরণস্বরূপ, একদল হল হানাফি এবং অন্য দল হল সানি মুসলিম। তারা দুইভাবে তারাবির নামাজ আদায় করে। সুতরাং প্রার্থনাগুলি এক-এক ভিত্তিতে একই রকম, তবে সমস্ত প্রার্থনা সর্বশক্তিমান আল্লাহর আনুগত্য স্বীকার করার জন্য।
তারাবির নামাজ ইশারের নামাজের পর দুই রাকাত করে সুন্নাহর নামাজ আদায় করতে হয়। তবে কত রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত অনেকেই। কেউ কেউ বলে তারাবির নামাজের ৮ রাকাত, আবার কেউ বলে তারাবির নামাজ ২০ রাকাত।
তারাবির নামাজ পড়ার জন্য আপনাকে দুই রাকাত করে নিয়াত করতে হবে। প্রতি দুই রাকাত নামাজের জন্য আপনি এই বলে নিয়াত করবেনঃ হে আল্লাহঃ আমি কিবলামুখি হয়ে তোমার নামে দুই রাকাত সুন্নাতে তারাবির নামাজের নিয়াত করলাম, আল্লাহু আকবর। মানে আপনি নামাজ শুরু করবেন দুই রাকাত পড়ে।
আপনি প্রত্যেক রাকাতে যে কোন সূরা পাঠ করতে পারেন, আপনি চাইলে সেই দশটি সূরা পাঠ করতে পারেন বা ইচ্ছা করলে আপনি পবিত্র কোরআন থেকে যে কোন আয়াত ও তিলাওয়াত করতে পারেন।
আর প্রতি চার রাকাতে আপনি সিজদায় বসে নিচের সূরা টি পাঠ করতে পারেন,এতে ভাল ফযিলত আছে।
তারাবির নামাজের দোয়া ও মোনাজাত
তারাবির নামাজের সূরা
বাংলাদেশে তারাবির নামাজ অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশ জনপ্রিয়। তরুণ-বৃদ্ধ সবাই মসজিদে গিয়ে তারাবির নামাজ আদায় করে। কারণ ইসলামে তারাবির নামাজের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
দোয়াঃ “সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি সুবহানাযিল ইযযাতি ওয়াল আযমাতি ওয়াল হাইবাতি ওয়াল কুদরাতি ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল জাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হায়্যিল্লাযি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।”
তারাবির নামাজের মোনাজাত
তারাবির নামাজ আদায়ের পর প্রত্যেক মুসলিমের উচিত তারাবির মোনাজাত করা। কারণ তারাবির নামাজের পর তারাবির মোনাজাত একটি বিশেষ ধরনের মোনাজাত । তারাবির নামাজের পরেই এই মোনাজাত করা হয়। তাই সবাই মিলে তারাবির দোয়ায় অংশগ্রহণ করা উচিত।
তারাবির নামাজের খুব সুন্দর একটি মোনাজাত আছে।
“আল্লাহুম্মা ইন্না নাসআলুকাল জান্নাতা ওয়া নাউজুবিকা মিনাননার। ইয়া খালিক্বাল জান্নাতি ওয়ান নার। বিরাহমাতিকা ইয়া আঝিঝু ইয়া গাফফার, ইয়া কারিমু ইয়া সাত্তার, ইয়া রাহিমু ইয়া ঝাব্বার, ইয়া খালিকু ইয়া বার্রু। আল্লাহুম্মা আঝিরনা মিনান নার। ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝিরু, ইয়া মুঝির। বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।”
তাছাড়া তারাবিহ নামাজের পর সাইয়্যিদুল ইসতেগফারও পড়া যেতে পারে-
“আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।”
মেয়েদের তারাবি আদায় করার নিয়ম
আমাদের সমাজে অনেক মা বোনই বাসায় তারাবির নামাজ আদায় করে থাকেন, তাদের তারাবির নামাজের নিয়ম উপরিক্ত নিয়মের মত একই, যেহেতু তারা জামাতে নামাজ আদায় করার সুযোগ কম পায়, তাই তারা নির্ধারিত ১০ টি সূরা দিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন।
ছেলেদের তারাবি আদায় করার নিয়ম
ছেলেদের তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম উপরিক্ত উল্লেখিত নিয়মের মতই, ছেলেরা যেহেতু জামাতে ইমামের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়ে, সে ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের সূরা পড়তে হয়না।
ঘরে বসে তারাবির নামাজ পড়ার নিয়ম
তারাবির নামাজ পড়া সুন্নাত, এটি ফরজ নয়, এটি যে মসজিদে বসে পড়তেই হবে এমন কোন কথা নেই, তবে আমাদের দেশে তারাবি নামাজ ঘটা করে মসজিদে পড়ান হয়। বাসায় তারাবি পরার নিয়ম মসজিদে তারাবি পড়ার মতই, যেখানেই পড়া হোক না কেন, আপনাকে দুই রাকাত করে করেই পড়তে হবে, বাসায় পড়লে পার্থক্য এই যে, সূরা গুলি আপনার নিজের পাঠ করতে হবে।
তারাবি পড়তে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি দরকার তা হল একাগ্রতা, আপনি একাগ্র হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ পড়লে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।ইনশাহ আল্লাহ।
তারাবির নামাজ আসলে কয় রাকাত?
কেউ কেউ বলে তারাবির নামাজ ৮ রাকাত কেউ কেউ বলে তারাবি ২০ রাকাত,তবে আমাদের দেশে তারাবি নামাজ ২০ রাকাত ধরেই আদায় করা হয়।
তারাবির নামাজ ফরজ না সুন্নাত?
তারাবির নামাজ অবশ্যই সুন্নাত, এটি ফরজ এই বিষয়ে কোন ধরনের তথ্য পাওয়া যায়নি। আমাদের নবীজি প্রতি রমজানে এই তারাবির নামাজ আদায় করতেন, সে সুত্রে মুসলমানরা এই নামাজ প্রতি রমজানে আদায় করেন।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সুবিধার জন্য-
- তারাবির এর সময় হচ্ছে ইশার ফরজ নামাযের পর ফজরের ওয়াক্তের আগ পর্যন্ত। জামাতে তারাবির নামাজ আদায় করা সুন্নাত-ই-কিফায়া।
- এটা মুস্তাহাব যে, রাত্রির এক-তৃতীয়াংশ অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তা বিলম্বিত করা এবং যদি আপনি অর্ধেক রাত অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন, তাহলে কোন ক্ষতি নেই।
- পুরুষদের জন্য তারাবির নামাজ যেমন সুন্নাত-ই-মুয়াক্কাদাহ, ঠিক তেমনই এটি মহিলাদের জন্য সুন্নাত-ই-্মুয়াক্কাদাহ এবং তাদের এটি মিস করার অনুমতি নেই।
- তারাবির নামাজের বিশ রাকাতকে দুই, দুই রাকাত করে আদায় করতে হবে, অর্থাৎ প্রতি দুই রাকাতের পর সালাম ফিরাতে হবে ,মোট দশ বার সালাম ফিরাতে হয়।প্রতি চার রাকাতের পর বিশ্রাম নেওয়া মুস্তাহাব, এই বিশ্রামকে তারভিহ বলা হয়।
- তারভিতে আপনি চুপ করে থাকতে পারেন বা আপনি কিছু তাসবিহ, কুরআন, দুরুদ শরিফ বা দুয়া প্রার্থনা করতে পারেন এবং যদি তিনি চান তবে তিনি একা নফল নামাজ পড়তে পারেন, তবে জামাতের সাথে এটি করা মাকরুহ।
- ইশারের ফরজ আদায় না করা অবধি বেতের বা তারাবি কোনটাই আদায় করা যাবেনা।
- যিনি ফরজ একা আদায় করেছেন, সে চাইলে তারাবি জামাতে আদায় করতে পারেন, তবে সে ক্ষেত্রে বেতের একা আদায় করতে হবে, তবে সব সময় চেষ্টা করবেন ফরজ নামাজ জামাত সহিত পড়া।
- আপনি যদি দেখেন আপনার তারাবির কিছু রাকাত বাকি থাকতেই ইমাম উঠে দাড়িয়ে বেতের পড়া শুরু করেছেন তাহলে, আপনি তখন বেতের পড়বেন, তারপর আপনি তারাবি আদায় করবেন, বেতের কিন্তু ওয়াজিব, সুন্নাতের জন্য কোনভাবেই ফরজ বা ওয়াজিব মিস করা যাবেনা।
- একটি হাফিজকে তারাবি পড়ানোর জন্য বেতন দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয় না এবং দাতা এবং গ্রহণকারী উভয়ই পাপী এই ক্ষেত্রে
শেষ কথা
আশা করি, এই লিখার মাধ্যমে আপনি তারাবির নামাজের নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত ধারনা পেয়েছেন, এখন আপনি সঠিক ভাবে নামাজ আদায় করতে পারবেন, ইনশাহ আল্লাহ।
বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।