অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম | জাতীয় পরিচয় পত্র

অনলাইনে নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম

এন আইডি কার্ড একজন নাগরিকের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটি একজন নাগরিকের পরিচয় বহন করে। এর মাধ্যমে আপনি কোন দেশের নাগরিক তা বুঝা যায়। বাংলাদেশে আইডি কার্ডের অধিকারী হতে হলে সর্বনিম্ন ১৮ বছর হতে হবে। ১৮ বছর হলে আপনি এনআইডি কার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। বর্তমানে বাংলাদেশের নাগরিকদের যে আইডি কার্ড দেওয়া হয় তাকে বলা হয় স্মার্ট কার্ড বা নতুন  এনআইডি কার্ড।

 আজকের এই লিখায় নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।

 

ভোটার আইডি কার্ড বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড কি?

মুল আলোচনায় যাওয়ার আগে, একটু সংক্ষেপে এন আইডি কার্ড বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড কি সে সম্পর্কে আলোচনা করে নেওয়া যাক।

 

ভোটার আইডি কার্ডকে মুলত  জাতীয় আইডি কার্ড – সাধারণত এনআইডি কার্ড বলা হয় – বা জাতীয় পরিচয় পত্র ও বোঝানো হয়। নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ এই আইডি কার্ড ইস্যু করে। একটি এনআইডি কার্ড বাংলাদেশে ভোটার কার্ড হিসেবেও কাজ করে। আপনি যদি ১ লা জানুয়ারী ২০১৬ এর আগে বাংলাদেশী নাগরিক হন তবে আপনার বয়স ১৮ বছর বা তার বেশি হলে আপনি ভোটার হিসাবে নিবন্ধন করতে পারেন। তবে হ্যাঁ আইডি কার্ড ইস্যু করতে হলে আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ হতে হবে।

 

আইডি কার্ডকে স্মার্ট বা বায়োমেট্রিক কার্ড ও বলা হয়। বাংলাদেশের নাগরিকদের একাধিক অত্যাবশ্যকীয় পাবলিক সার্ভিস, যেমন ইউটিলিটি সংযোগ পাওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি সেবা, যেমন ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এই আইডি  কার্ড বা জাতীয় পরিচয় পত্র প্রয়োজন।

 

প্রাথমিকভাবে, ২০০৬ সাল থেকে কাগজ ভিত্তিক লেমিনেটেড এনআইডি কার্ড ইস্যু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই পেপার ভিত্তিক লেমিনেটেড আইডি কার্ড সম্ভবত ২০১৬ সালের দিকে এই বায়োমেট্রিক বা স্মার্ট কার্ড ইস্যু করা হয়।

 

কার্ডধারীর জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি জালিয়াতি এবং জালিয়াতি রোধ করার জন্য এটি করা হয়েছিল। সরকার বাংলাদেশের সকল প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে বিনামূল্যে স্মার্ট আইডি কার্ড প্রদান করে থাকে।

 

আপনার কেন এনআইডি কার্ড প্রয়োজন?

জাতীয় পরিচয়পত্র বাংলাদেশ বাধ্যতামূলক। এই এনআইডি কার্ড ছাড়া আপনি কিছুই করতে পারবেন না। এই কার্ডটি আপনাকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে সহায়তা করে। দেখে নেওয়া যাক জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার কিছু কারণ।

 

  • আপনি ভোট দিতে পারেন।
  • আপনি সরকারের কাছ থেকে একটি পাসপোর্ট নিতে পারেন, তবে জন্মের শংসাপত্র কিছু ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে।
  • এটি আপনাকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে সহায়তা করতে পারে
  • চাকরির নিরাপত্তায় সহায়তা করে
  • ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করে, কারণ আপনার ট্রেড লাইসেন্স প্রয়োজন
  •  করের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু করতে সহায়তা করে
  • ইউটিলিটি অর্জন করতে সহায়তা করে

 

সুতরাং এন আইডি কার্ডের প্রয়োজনীয়তা বলাই বাহুল্য। এন আইডি কার্ড ছাড়া চলা আসলেই মুশকিল।

 

এন আইডি কার্ডের ইন্সট্রাকশন

এন আইডি কার্ডের জন্য এন আইডি অফিস থেকে কিছু ইন্সট্রাকশন দেওয়া হয়, যেমনঃ

 

  • বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন একটি মাত্র এনআইডি কার্ড ইস্যু করতে পারবে।
  • শুধুমাত্র নিবন্ধিত ব্যক্তি একটি এনআইডি কার্ড পাবে, নিবন্ধন ছাড়া এন আইডি কার্ড পাওয়া যাবেনা।

 

এনআইডি কার্ডের জন্য  একজন নাগরিকের যোগ্যতা

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের মতে, একজন বাংলাদেশের নাগরিক অবশ্যই বাংলাদেশের কোন এলাকার বাসিন্দা হবে, তাহলে যদি তার ১৮ বছর হয়ে থাকে বা তার ও বেশি হয়ে থাকে,তারপর ও যদি নিবন্ধনের জন্য আপিল করে না থাকে্‌, তাহলে নিবন্ধনের জন্য আপিল করতে হবে।

 

বাংলাদেশের এন আইডি কার্ডের জন্য যে যে রিকুয়ারমেন্টগুলি দরকার তার তালিকা নিম্নে দেওয়া হলঃ

 

  • একজন বাংলাদেশী নাগরিক হতে হবে এবং বাংলাদেশে বসবাস করতে হবে।
  • কমপক্ষে ১৮ বছর বয়সী হতে হবে
  • একটি নির্বাচনী এলাকার বাসিন্দা হতে হবে

 

এন আইডি কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

এন আইডি কার্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হলে কি কি কাগজ পত্র দরকার তা জানা দরকার, এটি আসলেই খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় একটি এন আইডি কার্ডের অধিকারী হওয়ার জন্য।

তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক, এন আইডি কার্ডের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের তালিকাঃ

 

  • এইচএস.সি বা সমতুল্য সার্টিফিকেট
  • জন্ম নিবন্ধনের সনদ
  • পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টিআইএন সার্টিফিকেট
  • ইউটিলিটি বিলের ফটোকপি
  • বাড়ি ভাড়ার রসিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ – (বাসার ঠিকানার প্রমাণ হিসাবে)
  • নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য হিসাবে)
  •  বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি

 

বাংলাদেশে এন আইডি কার্ডের মেয়াদ

একটি এক আইডি কার্ডের মেয়াদ উক্ত এন আইডি কার্ড  ইস্যুর তারিখ থেকে পনের (১৫) বছরের জন্য বৈধ। তবে প্রত্যেক নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ার অন্তত ৬ মাস আগে পুনরায় নিবন্ধন করতে হবে।

 

এতক্ষণ এন আইডি কার্ড কি, তার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপ্ত্র ,মেয়াদ এই সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে,এখন আলোচনা করা হবে নতুন বা স্মার্ট এনআইডি কার্ডের রেজিস্ট্রেশনের নিয়ম।

 

নতুন এন আইডি কার্ড করার নিয়ম

নতুন আইডি কার্ডের জন্য রেজিস্ট্রেশন করার দুই ধরনের নিয়ম রয়েছে। বর্তমানে প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে নতুন আইডি কার্ডের জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করা যায়। তবে আপনি চাইলে অফলাইনে মানে আগে মানুষ যেভাবে অফিসে যেয়ে ফর্ম ফিল আপ করে করত, তা ও করতে পারেন। তাহলে নতুন এই আইডি কার্ড রেজিস্ট্রেশন করার দুইটি নিয়ম আছে, একটি হল, অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এবং অফলাইন বা সাধারণ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া।

অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করতে হলে নিম্নলিখিত কাজ গুলো করতে হবে।

 

  • একজন ভোটারকে অবশ্যই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে তার তথ্য লিপিবদ্ধ করতে হবে। আবেদনকারীর সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য মনোনীত নিবন্ধন ফর্মগুলিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
  • একজন ব্যক্তি https://services.nidw.gov.bd/nid-pub গিয়ে অনলাইনে তার নিবন্ধন প্রক্রিয়া শুরু করতে পারেন এবং সমস্ত প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে ফর্মটি পূরণ করতে পারেন।
  • শুধুমাত্র  নিজের নাম ছাড়া সমস্ত তথ্য বাংলা ইউনিকোডে টাইপ করতে হবে।
  • সমস্ত তথ্য দেওয়ার পরে, একবার চেক করে দেখুন সব কিছু ঠিক আছে কিনা, যদি ভুল হয় তাহলে আপনি ঠিক করার সুযোগ পাবে, মনে রাখবেন, ভুল তথ্য দিলে কিন্তু সমস্যা হবে।
  • এরপর, ফর্মটি পিডিএফ ফর্ম্যাটে প্রিন্ট আউট করুন এবং এটি আপনার স্থানীয় নির্বাচন কমিশনে জমা দিন।
  • আপনার তথ্য ও ঠিকানা যাচাই করার পরে, আপনার কার্ড বিতরণ করা হবে।
  • রসিদের ফটোকপি দেওয়ার মাধ্যমে কার্ড সংগ্রহ করুন। 
  • মনে রাখবেন, বাংলাদেশে অনলাইনে এই প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার অবশ্যই একটি ইমেল এড্রেস এবং ফোন নম্বর থাকতে হবে।

অফলাইন বা সাধারণ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া

অফলাইন বা সাধারণ রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াতে এন আইডি তুলতে হলে, নিচের কাজগুলি করতে হবে।

 

    • বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন প্রতি বছর নতুন ভোটার নিবন্ধন ঘোষণা করে। এটি সাধারণত নভেম্বরের শেষের দিকে শুরু হয় এবং ১০ দিনেরও বেশি সময় ধরে স্থায়ী হয়।
    • এই সময়ের মধ্যে, একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন বা মনোনীত নির্বাচন কমিশনের অফিসে তার পরিচয় নিবন্ধন করতে হবে।
    • রেজিস্ট্রেশন শেষ করার পর ওই ব্যক্তিকে একটি স্লিপ দেওয়া হবে। স্লিপে নিবন্ধন কেন্দ্রগুলিতে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ সম্পর্কিত তথ্য দেওয়া থাকে।
    • একজন ব্যক্তিকে অবশ্যই ফটোগ্রাফ এবং ডেটা এন্ট্রির জন্য নির্ধারিত দিনে নিবন্ধন কেন্দ্রে উপস্থিত থাকতে হবে।
    • ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের সাথে দেখা করার আগে, উক্ত নিবন্ধক ব্যক্তিকে সাধারণত মনোনীত তথ্য সংগ্রহ এবং স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি দ্বারা যাচাই করা হয়।
  • ভেরিফিকেশনের পর ডেটা এন্ট্রি অপারেটর ওই ব্যক্তির ছবি, আঙুলের ছাপ নিয়ে সেই ব্যক্তির গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নির্বাচন কমিশনের সার্ভারে আপলোড করবে।
  • ভোটার ড্রাফ্‌ট ১৫ দিনের মধ্যে ফটোকপি করে আপনাকে তথ্য দেখার সুযোগ দিবে যাতে আপনি চেক করতে পারেন, আপনাকে ১৫ দিনের মধ্যেই কাজটি করতে হবে, কারণ ১৫ দিন পর তা বাতিল হয়ে যায়।
  • সংশোধন ও আপডেট করার পর ভোটার ডাটাবেজ আপডেট  করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয় এবং বিতরণের জন্য এনআইডি কার্ড প্রস্তুত করা হয়।

 

শেষ কথা

আশা করি, আপনারা উপরিক্ত তথ্যের মাধ্যমে স্মার্ট বা নতুন এন আইডি কার্ড করার নিয়ম, সে সম্পর্কে পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন আমাদের বিভিন্ন তথ্য প্রতিনিয়ত শেয়ার করা হয়ে থাকে। সঞ্চয়পত্রের নতুন নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!