গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ | গর্ভবতী হলে করণীয়

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ

আপনি গর্ভবতী নাকি সেটি আপনি গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহে জানতে পারবেন, এটি কনফার্ম করার জন্য সহজ উপায় হল প্রেগনেন্সি টেস্ট। তবে এই টেস্ট ছাড়া ও আপনি গর্ভবতী কি না তা বুঝতে পারবেন। আগের দিনের মানুষরা প্রেগনেন্সি টেস্ট করত না, তারা এমনিতেই কিছু লক্ষন দেখে বুঝতে পারত যে কেউ গর্ভবতী কি না।

 

আজকে এই লিখায় গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

 

গর্ভবতী হওয়ার কারণ কি?

 

যখন একটি শুক্রাণু কোন শরীরের ডিম্বাশয়ে প্রবেশ করে তখন থেকেই গর্ভবতী হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়, সাধারণত একটি শুক্রাণু একটি ডিম্বাশয়কে নিষেক করার দুই সপ্তাহ শেষে তৃতীয় সপ্তাহের শুরুর দিকে গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণগুলো দেখা দিতে থাকে।

 

গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ

 

গর্ভাবস্থার সবচেয়ে সাধারণ প্রাথমিক লক্ষণগুলি নিচে উল্লেখ করা হলঃ

 

শারিরিক লক্ষণঃ

পিরিয়ড মিস হওয়াঃ আপনি যদি কন্সিভ করে থাকেন তাহলে আপনার পিরিয়ড মিস হওয়া খুব স্বাভাবিক একটি প্রাথমিক লক্ষণ, এই উপসর্গটি আপনার প্রথম সপ্তাহেই দেখা দিবে। যদি আপনার নির্দিষ্ট সময়ে পিরিয়ড না হয় তাহলে ধরে নিন যে আপনি কন্সিভ করেছেন। তবে আপনার পিরিয়ড যদি অনিয়মিত হয়, তাহলে বলব যে আপনি চেক করে নিন।

 

স্তন নরম হয়ে যাওয়া বা ফুলে যাওয়াঃ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমোনের পরিবর্তনগুলি আপনার স্তনকে সংবেদনশীল, কোমল করে তোলে, সাথে স্তন ফুলে ফুলে ও যায়, আপনি এই পরিবর্তন টা আস্তে আস্তে বুঝতে পারবেন।

 

বমি বমি ভাবঃ মর্নিং সিকনেস, যা দিন বা রাতের যে কোনও সময় ঘটতে পারে, প্রায়শই আপনি গর্ভবতী হওয়ার এক থেকে দুই মাস পরে শুরু হয়। তবে কিছু মহিলা অনেক আগের থেকেই যেমনঃ প্রথম সপ্তাহেই বমি বমি ভাব অনুভব করে এবং আবার কেউ কেউ কখনও এটি অনুভব করে না। তবে বমি বমি ভাব যে হবেই তা কিন্তু নয়।

 

প্রস্রাব বৃদ্ধিঃআপনি যদি কন্সিভ করেন তাহলে আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাব করতে পারেন। গর্ভাবস্থায় আপনার শরীরে রক্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আপনার কিডনিগুলি অতিরিক্ত কাজ করতে থাকে করে যার ফলে আপনার মুত্রাশয়ে চাপ সৃষ্টি করে আপনার প্রস্রাব বৃদ্ধি করে।

 

শরীর দুর্বল লাগাঃ কন্সিভ করার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে আপনার শরীর হালকা হালকা দুর্বল লাগা শুরু হবে, এটি খুব সাধারণ লক্ষণ।

 

ক্লান্তিঃ গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে ক্লান্তি অনেক আগে রয়েছে। যাইহোক, গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে হরমোন প্রোজেস্টেরনের মাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায় যার কারণে ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা দেয়।

 

হালকা স্পটিংঃ লাইট স্পটিং গর্ভাবস্থার প্রথম লক্ষণগুলির মধ্যে একটি হতে পারে। এটি ইমপ্লান্টেশন রক্তপাত হিসাবে পরিচিত, এটি ঘটে যখন নিষিক্ত ডিম জরায়ুর আস্তরণের সাথে সংযুক্ত হয় – গর্ভধারণের প্রায় ১০ থেকে ১৪ দিন পরে।

 

ক্র্যাম্পিংঃ কিছু মহিলা গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে জরায়ুতে হালকা ক্র্যাম্পিং অনুভব করেন। এটি সবার ক্ষেত্রে না ও হতে পারে।

 

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনগুলি আপনার পাচনতন্ত্রকে ধীর করে দেয়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ হতে পারে।

 

ন্যাসাল কনজেসনঃ হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি এবং রক্ত উৎপাদন আপনার নাকের শ্লেষ্মা ঝিল্লিগুলি ফুলে যেতে পারে, শুকিয়ে যেতে পারে যার ফলে ন্যাসাল কনজেসন হয় এবং সহজেই রক্তপাত হতে পারে।

 

মাথা ব্যথাঃ মাথা ব্যথা গর্ভাবস্থায় খুব কমন লক্ষণ, এই সময় অনেক মাথা ব্যথা হতে পারে, জ্বর জ্বর লাগতে পারে,যাদের মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের মাথা ব্যথা হওয়া খুব স্বাভাবিক।

 

জয়েন্ট বা মাসেল পেইনঃ এই সময় জয়েন্ট বা মাসেল পেইন খুবই স্বাভাবিক বিষয়, এই সময় আপনি যদি হালকা নড়াচড়া করেন তাতে ও জয়েন্ট বা মাসেল পেইন দেখা দেয়।

 

পেটে ব্যথাঃ এই সময় হরমোনাল চেঞ্জের কারণে পেটে হালকা ব্যথা দেখা দিতে পারে। এইটা মারাত্নক কিছু নয়।

 

ওজন কিঞ্চিৎ বেড়ে যাওয়াঃ অনেকেরই ফ্লুয়িড রিটেনশনের কারণে কন্সিভ করার সাথে সাথেই ওজন বেড়ে যায়, যে লক্ষণটি অনেকেরই প্রেগনেন্সি কনফার্ম হওয়ার পর দেখা দেয় তা অনেকের গর্ভাবস্থার প্রথম সপ্তাহে দেখা দিতে পারে।

 

মানসিক লক্ষণ

মুডিনেসঃ মুড সুইং গর্ভাবস্থায় একটি উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আপনার শরীরে হরমোনাল চেঞ্জের বন্যা বয়ে যায় যার কারণে আপনার মধ্যে মুডিনেস বা মুড সুইং দেখা যায়। আপনি অল্পতেই রিএক্ট করতে পারেন বা কেঁদে ফেলতে পারেন, যাদের ফার্স্ট টাইম প্রেগনেন্সি তারা বেশি সংবেদনশীল হয়ে যান।

 

ডাউন ফিল করাঃ গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে আপনি খুব ডাউন বা স্ফীত ফিল করতে পারেন, আপনার খুব বেশি হতাশ লাগতে পারে বা রাগ লাগতে পারে।

 

ভয় পাওয়াঃ এই সময় মন অনেক বেশি নরম হয়ে যায়, তখন আপনি অল্পতেই ঘাবড়ে যেতে পারেন বা ভয় পেতে পারেন, এইজন্য এই সময় আপনাকে ভুতের মুভি কম দেখতে বলা হয়।

 

খাবারে অরুচিঃ আপনি যখন কন্সিভ করবেন,তখন প্রথম প্রথম আপনার মুখে স্বাদ থাকবে না,খেতে ইচ্ছা করবেনা, অনেক প্রিয় খাবার আপনি তখন সহ্য করতে পারবেন না, যেমনঃ অনেকে আছেন চা খান, তবে গর্ভাবস্থায় চায়ের গন্ধ সহ্য করতে পারেন না। এই সময়ে জিহ্বায় একটা আস্তরণ পড়ে যার কারণে খাবারে অরুচি দেখা দেয়। আপনি যখন গর্ভবতী হন, তখন আপনি নির্দিষ্ট গন্ধের প্রতি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারেন এবং আপনার স্বাদের অনুভূতি পরিবর্তন হতে পারে।

 

খাবারে অতিরিক্ত রুচিঃ খাবারে অরুচি যেমন একটি লক্ষণ , তেমনি খাবারে অতিরিক্ত রুচি এই সময়ের একটি সাধারণ লক্ষণ। অনেকেরই আছে খাওয়ার চাহিদা অনেক বেশি বেড়ে যায়, মুলত শারীরিক পেশীগুলি বেশি কাজ করায়, এই সময় খাওয়ার অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হয়।

 

আপনি কিভাবে বুঝবেন যে আপনি অন্তঃসত্ত্বা?

উপরের লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই যে আপনি অন্তঃসত্ত্বা তা কিন্তু নয়, এমন ও হতে পারে যে আপনি অসুস্থতা থেকে উঠেছেন বা আপনার পিরিয়ড কোন কারণে মিস হয়েছে , কিছু দিন পর আবার শুরু হবে।

 

তবুও, যদি আপনি পিরিয়ড মিস করেন এবং উপরের কিছু লক্ষণ লক্ষ্য করেন তবে একটি হোম প্রেগনেন্সি টেস্ট করুন বা আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীকে দেখান। যদি আপনার টেস্টের রেজাল্ট পজেটিভ হয় আপনার স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহকারীর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করুন। আপনি যত আগে কনফার্ম করতে পারবেন তত আগে প্রসুতি সেবা গ্রহণ করতে পারেন।

 

আপনি যদি কন্সিভ করে থাকেন তাহলে এখন থেকেই বেশি করে ভিটামিন আর মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া শুরু করুন। কারণ আগের থেকেই সচেতন হলে আপনার অনাগত সন্তানের জন্যই ভাল হবে।

 

অন্তঃসত্ত্বা হলে কি কি করণীয়?

আপনি যদি প্রথম সপ্তাহ থেকেই বুঝতে পারেন যে আপনি অন্তঃসত্ত্বা তাহলে আপনাকে আগের থেকেই খাওয়া দাওয়া এবং কাজ কর্মের বিষয়ে সচেতন হতে হবে। কন্সিভ করার সাথে সাথে মুখে একটু অরুচি দেখা দেয় সে ক্ষেত্রে আপনি ভিটামিন সি জাতীয় খাবার বা টক জাতীয় খাবার খাওয়া শুরু করতে পারেন, এতে মুখের আস্তরণ দূর হবে আপনার খাওয়ার রুচি বাড়বে।

 

আর আপনি একদমই ভারি জিনিসপত্র বহন করবেন না, অযথা নড়াচড়া করবেন না, ভারি কাজ করবেন না, সুগন্ধি কম ইউজ করবেন, কসমেটিক কম ইউজ করবেন, ভিড়ের মধ্যে কম যাবেন, একটু সাবধানতা অবলম্বন করে চলবেন।

 

আর একদম ই স্ট্রেস নিবেন না, ভাল চিন্তা ভাবনা করবেন, সবচেয়ে বেশি ভাল হয় যদি মেডিটেশন করেন বা নিঃশ্বাসের ব্যায়াম করেন তাহলে আপনি ভেতর থেকে প্রফুল্ল থাকবেন।

 

শেষ কথা

আজকের এই লিখার মাধ্যমে গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পাওয়া গেল, আশা করি পাঠকেরা যথার্থভাবে উপকৃত হয়েছেন।

 

বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। ই পাসপোর্ট চেক করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!