লম্বা হওয়ার উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়াম

লম্বা হওয়ার উপায়

একটি সুন্দর ফিগার সাথে সুন্দর হাইটের অধিকারী কে না হতে চায়, এই দুইটি জিনিসের সমন্বয়ে আপনি হয়ে উঠতে পারেন অনন্য , ছেলে মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রে এই দুইটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের জন্য আকর্ষণীয় হওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

 

বাংলাদেশের মেয়েদের হাইট এভারেজ ৫ ফিট থেকে ৫.২, এর থেকে বেশি হলে আপনি লম্বা বলেই গণ্য হবেন, যদি আপনি ৫.৫ বা তার বেশি হন তাহলে আপনি বেশ লম্বা এবং আকর্ষণীয় বলে গণ্য হবেন।

 

বাংলাদেশে ছেলেদের এভারেজ হাইট ৫.৫ থেকে ৫.৮ সাড়ে ৮ অবধি, এর থেকে লম্বা ছেলে ও আছে।

 

তবে যারা একটু খাটো তারা প্রত্যেকেই নিজের মত করে চেষ্টা করেন লম্বা হওয়ার। তবে হাইট এমন একটি বিষয় যার পিছনে অনেক কিছু কাজ করে।

 

উচ্চতার নির্ধারক

বেশ কয়েকটি বিষয় আপনার হাইটকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটি মনে করা হয় যে জেনেটিক বিষয়গুলি আপনার উচ্চতার ৬০ থেকে ৮০ শতাংশেকে নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া কিছু পরিবেশগত বিষয় যেমনঃ ব্যয়াম, পুষ্টি এইগুলো হাইটের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশকে নিয়ন্ত্রণ করে।

 

মানুষ কখন লম্বা হয়?

১ বছর বয়স থেকে বয়ঃসন্ধির মধ্যে, বেশিরভাগ মানুষ প্রতি বছর প্রায় ২ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।যদি আপনার বৃদ্ধি ভাল হয় বয়ঃসন্ধিকালে , আপনি প্রতি বছর ৪ ইঞ্চি হারে বৃদ্ধি পেতে পারেন। তবে সবাই ভিন্ন গতিতে বেড়ে ওঠে।

 

মেয়েদের জন্য, এই বৃদ্ধি সাধারণত কিশোর বয়সে প্রথম দিকে শুরু হয়। তবে ছেলেরা তাদের কৈশোরের শেষের দিকে হঠাৎ করে বেড়ে উঠে।

 

সাধারণত বয়ঃসন্ধি পার হয়ে গেলে মানুষের উচ্চতা বাড়া বন্ধ হয়ে যায়। অনেক গবেষণায় বলে যে ২৫ পর্যন্ত মানুষের বৃদ্ধি হয়, যাই হোক আপনার উচ্চতা বাড়া বন্ধ হয়ে গেল মানে হল আপনি বুড়ো হয়ে গেছেন।

আজকের এই লিখায় লম্বা হওয়ার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

 

লম্বা হওয়ার উপায়

আজকাল প্রযুক্তির উন্নতির জন্য অনেক ধরনের ডিভাইস আবিষ্কার হয়েছে যা কিনা মানুষকে লম্বা হতে সাহায্য করে, এমন কি ডিজিটাল জুতা আছে যা পড়ে আপনি হাঁটলে আপনার উচ্চতা বাড়বে।

 

এছাড়া ঘরে কিছু সিম্পল এক্সারসাইজ করলে আপনি কিছুটা লম্বা হতে পারেন, যদি ও বিষয়টি আপনার শারীরিক ফিচারের উপর নির্ভর করে। যেমনঃ জাম্পিং জেগসঃ হাত উঁচু করে লাফানো , সূর্যকে নমস্কারঃ হাত টান টান করে লম্বা হয়ে ঘাড় উঁচু করে সূর্যের দিকে মুখ করে থাকা, আপনারা নিশ্চয়ই অমিতাভ বচ্চন আর শাহ্রুখ খান অভিনীত মহাব্বাতেন সিনেমাটা দেখেছেন, সেখানে সূর্যকে নমস্কার করা দেখায়, তাহলে বুঝতেই পারছেন কেন অমিতাভ বচ্চন কেন এত লম্বা?

 

আরেকটা বিষয় হল, আপনি যদি প্রতিদিন দড়ি লাফান, তাহলে আপনার উচ্চতা কিছুটা বাড়তে পারে।

 

যাই হোক, আপনি আর ও কিছু করতে পারবেন আপনার উচ্চতা বাড়ানোর জন্য মানে লম্বা হওয়ার জন্য। এই কাজ গুলো যে কোন বয়সের মানুষ করতে পারেন।

 

নিম্নলিখিত কাজ গুলো আপনি লম্বা হওয়ার জন্যঃ

 

সুষম খাদ্য গ্রহণ করা

আপনার ক্রমবর্ধমান বছরগুলিতে, আপনার যথার্থ বৃদ্ধি নিশ্চিত করার আগে এটি নিশ্চিত করুন যে আপনার দেহ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো পাচ্ছে।

এই জন্য আপনার সুষম ডায়েট অনুযায়ী চলতে হবে।

 

আপনার ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত:

  • তাজা ফল
  • তাজা সবজি
  • শস্য জাতীয় খাবার
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারঃ চর্বি বিহীন মাংস, ডিম, প্রাণীজ আমিষ
  • দুধ

 

যে ধরনের খাবারগুলি এড়িয়ে চলা উচিতঃ

  • চিনি
  • ট্রান্স ফ্যাটঃ সফট ড্রিংস
  • স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ ফ্রজেন ফুড, টিনের খাবার

 

যদি আপনার শরীর খুব বেশি খারাপ থাকে তাহলে আপনার বোন ডেনসিটি আপনার খাবারের চাহিদা কে প্রভাবিত করে, তবে সে ক্ষেত্রে আপনার ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া হতে পারে। এটি প্রায়শই সুপারিশ করা হয় যে ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সের পুরুষদের প্রতিদিন ১,২০০ মিলিগ্রাম (মিলিগ্রাম) ক্যালসিয়াম গ্রহণ করা উচিত।

 

ভিটামিন ডি হাড়ের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে। ভিটামিন ডি এর সাধারণ উৎসগুলির মধ্যে রয়েছে টুনা্মাছ, দুধ এবং ডিমের কুসুম। আপনি যদি আপনার ডায়েটে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি না পেয়ে থাকেন তবে আপনার দৈনিক ভিটামিন ডির চাহিদা পূরণের জন্য আপনার ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।

 

সাবধানতার সাথে পরিপূরক ব্যবহার করা

কেবলমাত্র কয়েকটি ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে বাচ্চাদের উচ্চতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন পরিপূরকের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে এবং যারা  প্রাপ্তবয়স্ক তাদের মোটা হওয়া রোধ করতে পারে।

 

উদাহরণস্বরূপ,আপনার  বৃদ্ধি সংক্রান্ত হরমোনের (HGH) উৎপাদন প্রভাবিত করার জন্য , আপনার ডাক্তার সিন্থেটিক HGH ধারণকারী একটি সম্পূরক সুপারিশ করতে পারেন।

 

এছাড়া বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্করা অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমাতে ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়ামের পরিপূরক গ্রহণ করতে পারেন।

 

যেমনঃ একজন বাচ্চা পূর্ণ একটি ডিম খেতে পারেন, কিন্তু যারা প্রাপ্ত বয়স্ক তাদের জন্য ডিমের কুসুম খাওয়া ঠিক নয়, সে ক্ষেত্রে তারা কুসুম ছাড়া দুইটি ডিম খেতে পারেন।

 

ঠিক মত ঘুমানো

পরিমিত ঘুম আপনার উচ্চতাকে অনেক ভাবে প্রভাবিত করে। আপনি যদি রাতে ঠিক মত না ঘুমান তাহলে আপনার শরীরের হরমোন ঠিকভাবে নিঃসৃত হয়না, যার ফলে আপনার শরীরের বিভিন্ন কাজের ব্যঘাত ঘটে।

কারণ আপনি যখন ঘুমান তখন আপনার শরীর  HGH জাতীয় হরমোন নিঃসরণ করে। আপনি যদি ঠিক মত না ঘুমান তাহলে এই হরমোন  উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে।

 

মেডিক্যাল সাইন্সের মতেঃ

  • ৩ মাস বয়স পর্যন্ত নবজাতকরা প্রতিদিন ১৪-১৭ ঘন্টা ঘুমায়
  • ৩-১১ মাস বয়সী শিশুরা ১২-১৭ ঘন্টা ঘুমায়
  • ১-২ বছর বয়সী বাচ্চারা ১১-১৪ ঘন্টা ঘুমায়
  • ৩-৫ বছর বয়সী ছোট বাচ্চারা ১০-১৩ ঘন্টা ঘুমায়
  • ৬-১৩ বছর বয়সী শিশুরা নয় থেকে ১১ ঘন্টা ঘুমায়
  • ১৪-১৭ বছর বয়সী কিশোর-কিশোরীরা আট থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমায়
  • ১৮-৬৪ বছর বয়সী প্রাপ্তবয়স্করা সাত থেকে নয় ঘন্টা ঘুমায়
  • ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের বয়স্ক প্রাপ্তবয়স্করা সাত থেকে আট ঘন্টা ঘুমায়

 

সক্রিয় থাকা

নিয়মিত শরীরচর্চার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটা আপনার পেশী এবং হাড় শক্তিশালী করে তোলে, এটি আপনার সঠিক ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে, এবং HGH সঠিকভাবে উৎপাদন করে।

 

স্কুলে শিশুদের দিনে কমপক্ষে এক ঘন্টা ব্যায়াম করা উচিত। মানে দৈনিক এক ঘণ্টা খেলাধুলা করা উচিত। তাদের এই বিষয়গুলোতে মনোযোগী হওয়া উচিত:

 

  • পুশআপ বা সিটআপ যা শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • যোগব্যায়াম যা শরীরকে ফ্লেক্সিবেল করে, এটি সাধারণত মেয়েরা করে।
  • বাইক চালানো বা দড়ি লাফানো।

 

কজন প্রাপ্তবয়স্ক চাইলে এই এক্সারসাইজ গুলি করতে পারে।  এইগুলো আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়তা করার পাশাপাশি, এটি আপনার অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি হ্রাস করতেও সহায়তা করে।

 

শরীরের অঙ্গভঙ্গি ঠিক করা

অনেকেই আছেন একটু কুঁজো হয়ে হাঁটেন এটি ঠিক নয়, এতে আপনার বডি স্ট্রেচ হয় না, যার ফলে আপনাকে খাটো দেখাতে পারে, ছোটবেলা থেকেই এই বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে, কুঁজো হয়ে না হেঁটে বুক সোজা করে হাঁটতে হবে, এতে বডি ভাল কত স্ট্রেচ হয়।

 

এছাড়া আপনি কিভাবে খাচ্ছেন, ঘুমাচ্ছেন এই বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে, সব সময় বডি মুভমেন্ট ঠিক রাখতে হবে।

 

যোগব্যয়াম করা

আপনি চাইলে আপনার উচ্চতা বাড়ানোর জন্য বডি স্ট্রেচিং এর এক্সারসাইজ করতে পারেন,কিছু পোজ আছে যেমনঃ মাউন্টেন পোজ, কোবরা পোজ, চাইল্ড পোজ , এইগুলো বডি স্ট্রেচ করে আপনার বডির ভ্লিউম বাড়িয়ে আপনার বডিকে লম্বা করে।

 

শেষ কথা

বেশিরভাগ মানুষই বয়ঃসন্ধিকালের সময়ই যা লম্বা হওয়ার হয়ে যায়, তা ও যদি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সাথে সাথে আপনি যদি নিজেকে লম্বা দেখাতে চান তাহলে ভাল মত এক্সারসাইজ করে নিজেকে ফিট রাখুন। অনেকেই আছেন মোটা হওয়ার কারণে খাটো দেখা যায়, সে ক্ষেত্রে বাড়তি ওজন কমিয়ে নিজেকে আকর্ষণীয় এবং লম্বা দেখাতে পারেন। আশা করি আজকে এই লিখা পড়ে লম্বা হওয়ার উপায় গুলো বুঝতে পেরেছেন।

 

বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। গর্ভবতী হওয়ার প্রথম সপ্তাহের লক্ষণ সমূহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!