অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম ও অঙ্গীকারনামা কি | নমুনা ফরমেট

অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম

অঙ্গীকারনামা মুলত বিজনেসের কাজে কোন চুক্তি করার ক্ষেত্রে লিখা হয়ে থাকে, এটি একটি প্রমাণ হিসেবে থাকে। অনেক সময় হয় কি সঠিক প্রমাণের অভাবে অনেক বড় আর্থিক ঝামেলায় পড়তে হয়। আমরা অনেক বাংলা সিনেমায় দেখে থাকি সঠিক প্রমাণের অভাবে নায়ক অনেক বড় আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হয়। আমাদের ইসলাম ধর্মে ও অঙ্গীকার নামা বা কোন কাজ করার যথার্থ প্রমাণ রাখার কথা বলা হয়েছে।

 

অঙ্গীকারনামা যে শুধু মাত্র বিজনেসের ক্ষেত্রে কাজে লাগে তা কিন্তু না, এটি শিক্ষা ক্ষেত্রে, চাকরির ক্ষেত্রে ও কাজে লাগে। এটি একটি কাজ শুরু করার বা কোন লেনদেনের একটি পেপার উইটনেস।

 

অঙ্গীকারনামা কি?

অঙ্গীকারনামা হল একধরনের চুক্তি পত্র, যা দুই পক্ষের মধ্যে হয়ে থাকে। বিজেনেসের ক্ষেত্রে সাধারণত দুই পার্টনারের মধ্যে হয়ে থাকে, এই ক্ষেত্রে দুই পক্ষের পজিশন সমান থাকে। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে দুই পক্ষের পজিশন সমান থাকেনা, যেমনঃ শিক্ষাক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ আর শিক্ষার্থীদের মধ্যে হয়ে থাকে, জাতীয় ক্ষেত্রে সরকার আর জনগনের মধ্যে হয়ে থাকে। এটি বাংলাদেশের আইন মোতাবেক একটি লিখিত ধাঁরা। এটি যে কোন কাজে একটি প্রমানপত্র হিসেবে কাজ করে, যাতে ভবিষ্যতে কোন ঝামেলায় পড়তে না হয়।

 

এই অঙ্গীকারনামায় দুই পক্ষের পরিচয় থাকে, তার সহিত কে কি করতে চলেছে তার বর্ণনা থাকে, স্বাক্ষর থাকে টাকা পয়সার বিষয় থাকলে তার পরিমাণ উল্লেখ থাকবে।

 

আজকের এই লিখায় অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হবে।

 

বিভিন্ন কারণে অঙ্গীকারনামা লিখা হয়ে থাকে, তা ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলঃ

 

ব্যবসায়িক অঙ্গীকারনামা

ব্যবসায়িক কাজে অঙ্গীকার নামা লিখতে হলে উভয়পক্ষের উপস্থিত থাকা আবশ্যক, এবং অবশ্যই প্রতিদানগত লেনদেনের বিষয়েই অঙ্গীকারনামা লিখা যাবে,আপনি যদি বিজনেসের জন্য অঙ্গীকার নামা লিখতে চান তাহলে এই বিষয়গুলো উল্লেখ থাকতে হবে।

 

যিনি লিখছেন তার পূর্ণ পরিচয়, তার নিজের নাম, বাবার নাম,মায়ের নাম, ঠিকানা, এই বিষয়টি শুরুতেই উল্লেখ করতে হবে।

 

তারপরে যে কারণে অঙ্গীকার করা হচ্ছে তা উল্লেখ করতে হবে, যদি টাকা লেনদেন হয় তাহলে টাকার অংকের পরিমাণ উল্লেখ করতে হবে, বা অন্য কোন কারণ হলে তা উল্লেখ করতে হবে।

 

সব শেষে টাকা পরিশোধ করার সময় বা কোন কাজ সম্পাদনের সময় উল্লেখ করে শেষ করতে হবে।

 

সবশেষে, লেখকের স্বাক্ষর দিয়ে শেষ করতে হবে।

 

লিখাটি এমন হতে পারে যে,

 

ধার শোধের অঙ্গীকারনামা

 

এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমি মোঃ ফয়সাল আহমেদ, পিতা: মোঃ ফারুক আহমেদ, মাতাঃ মোছাঃ রাইসা হাসান, গ্রাম/মহল্লাঃ আব্দুল্লাহপুর, পোষ্টঃ টঙ্গী, জেলাঃ ঢাকা ,আমি অত্র এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। নতুন ব্যবসায় শুরু করার জন্য আপনার থেকে ১০,০০,০০০ টাকা ধার হিসেবে গ্রহণ করেছি।

 

আপনার অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আগামি এক বছররের মধ্যে, ১৪/০৪/২০২৩ তারিখে এই টাকা ফেরত দিতে বাধিত থাকিব।

 

অঙ্গীকারকারীর স্বাক্ষর/টিপসহি

মোঃ ফয়সাল আহমেদ

গ্রাম/মহল্লাঃ আব্দুল্লাহপুর,

পোষ্টঃ টঙ্গী, জেলাঃ ঢাকা

 

 সরকারি কাজে অঙ্গিকারনামা

ধরুন আপনি ভোটার হওয়ার জন্য নতুন ভাবে নিবন্ধন করতে চান, সে ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামাটি এমন হতে পারে।

 

নতুন ভোটার হওয়ার অঙ্গীকারনামা

 

          এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমি মোঃ নিলয় আমিন , পিতা: মোঃ দেলোয়ার আমিন, মাতাঃ মোছাঃ সালমা বেগম, গ্রাম/মহল্লাঃসাগুফতা, পোষ্টঃঢাকা সেনানিবাস, জেলাঃঢাকা। আমি অত্র এলাকার একজন স্থায়ী বাসিন্দা। চাকরিরত/লেখাপড়ার কারণে বাড়ির বাহিরে অবস্থান করায় আমি সময়মত ভোটার হতে পারিনি। তাই নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হওয়ার জন্য আপনার দপ্তরে আবেদন দাখিল করছি। আমি আরো অঙ্গীকার করছি যে, আমি ইতোপূর্বে বাংলাদেশর কোথায়ও ভোটার হইনি এবং এই প্রথমবার ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করছি। যেহেতু একাধিকবার ভোটার হওয়া আইনত দন্ডণীয় অপরাধ সেহেতু আমি দ্বৈত ভোটার হলে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আমার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে এবং আমি তা মেনে নিতে সর্বদা বাধ্য থাকবো। এমতাবস্থায়, আমাকে নতুন ভোটার করার জন্য আপনার নিকট সবিনয় অনুরোধ করছি।

 

অঙ্গীকারকারীর স্বাক্ষর/টিপসহি

মোঃনিলয় আমিন

পিতাঃ মোঃ দেলোয়ার আমিন

গ্রাম/মহল্লাঃসাগুফতা, পোষ্টঃঢাকা সেনানিবাস, জেলাঃঢাকা

 

নতুন ভোটার হওয়ার জন্য এই অঙ্গিকার নামার সাথে আরও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ভোটার অফিসে যেতে হবে জমা দেওয়ার জন্য।

 

শিক্ষাগত অঙ্গীকারনামা

শিক্ষাগত অঙ্গীকারনামা মূলত শিক্ষার্থী তার কর্তৃপক্ষ মোতাবেক লিখে থাকে।

 

এইখানে সাধারণত শিক্ষার্থীর নাম, তার ডিপার্টমেন্ট, সেশন, পিতা, মাতার নাম, কোঁটা এসব উল্লেখ থাকে।

 

এইখানের লিখাগুলো সাধারণত এমন থাকে,

 

আমি ফাহিমা আফরিন মুন, পিতাঃমোঃ ফারুক আহমেদ এবং মাতাঃমোসাঃ সাহিদা আক্তার, এর কন্যা অত্র কোটাধারি ঢাকা সেনানিবাসের অধিবাসী, আপনার প্রতিষ্ঠানে (প্রতিষ্ঠানের নাম),অত্র ফ্যাকাল্টির অত্র ডিপার্টমেন্ট এ অত্র প্রোগ্রামে অধ্যয়ন করার জন্য ভর্তি হয়েছি।

 

আমি এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমি যতদিন এই প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করবো, আপনার প্রতিষ্ঠানের সকল নিয়ম কানুন মেনে চলবো।

 

অঙ্গীকারীর স্বাক্ষর

ফাহিমা আফরিন মুন

পিতাঃ মোঃ ফারুক আহমেদ

ঢাকা সেনানিবাস, ঢাকাঃ ১২০৬

 

বিয়ের অঙ্গীকারনামা

বিয়ে পড়াতে ও অঙ্গীকারনামা লিখা হয়, মুলত কাজী বিয়ে পড়ানোর সময় যা পাত্র পাত্রীর সামনে পাঠ করে সেটি মুলত বিয়ের অঙ্গীকারনামা। এই অঙ্গীকারনামায় পাত্রপাত্রীর নাম, পিতামাতার নাম, দেনমোহরের কথা উল্লেখ করে লিখা হয়, এটি মুলত কাজী অফিসে বানানো হয়, আগে তো হাতে লিখা কাবীননামা থাকতো, এখন প্রিন্টেড অঙ্গীকার নামা ইউজ করা হয়।

 

অঙ্গীকারনামা মুলত আপনি চাইলে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে থেকে স্যাম্পল দেখে অঙ্গীকারনামা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন।

 

এছাড়া আপনি যদি কোন প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে অঙ্গীকারনামা লিখতে চান তাহলে আপনি অত্র প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট থেকে অঙ্গীকারনামা ডাউনলোড করে নিতে পারেন।

 

সাধারণত সরকারি কাজ বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অঙ্গীকার করতে হলে সেই পেপার গুলো ইন্টারনেটে খুব সহজে পাওয়া যায়, আপনাকে এপ্লাই করতে হলে নির্ধারিত ওয়েবসাইট থেকে নির্ধারিত অঙ্গীকারনামা নামিয়ে পূরণ করতে হবে।

 

আর বিজনেসের লেনদেনের জন্য যে অঙ্গীকারনামা লিখা হয় তা মুলত নিজেরাই লিখে প্রিন্ট আউট করে নেয়, কারণ বিজনেসে একেক লেনদেনের এক এক রকম শর্ত এবং এক এক রকম টাকার পরিমাণ থাকে, তাই নিজেদের টা নিজেরাই তৈরি করে নিলেই ভালো। আপনি ইন্টারনেটে একটু একটু রিসার্চ করলেই দেখতে পাবেন যে বিজনেস রিলেটেড বিভিন্ন অঙ্গীকারনামা দেখা যায়, আপনি সেখানকার ফরম্যাট দেখলেই বুঝতে পারবেন।

 

আজকের এই লিখায় যে ফরম্যাটের কথা বলা হয়েছে সেটি সবচেয়ে স্ট্যান্ডার্ড ফরম্যাট এবং লিখতে ও সহজ।

 

অঙ্গীকারনামার প্রয়োজনীয়তা

অঙ্গীকারনামা কোন কাজ বা চুক্তির প্রমাণ হিসেবে কাজ করে, এটি থাকলে আপনি সহজেই যে কোন বিষয়ে কোন ঝামেলা ছাড়া কাজ সমাধান করতে পারবেন। এটি থাকলে সহজেই কেউ বিনা নোটিশে আপনাকে কোন কাজ থেকে বের করে দিতে পারবে না। মহাব্বাতেন সিনেমাটিতে দেখেছেন, শাহরুখ খান কিভাবে তার চাকুরীটি বাচিয়েছিলেন, অঙ্গীকারনামার জোরে। আসলে বলা যায় যে অঙ্গীকারনামা একটি শক্তি, এটি যে কোন কাজে প্রমাণ হিসেবে থেকে একটি রক্ষা কবচের মত কাজ করে।

 

শেষ কথা

আজকের এই লিখায় অঙ্গীকারনামা লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানান হল। এছাড়া কত ধরনের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারনামা ব্যবহার করা হয় এবং এর আসল গুরুত্ব সে সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে জানা গেল। অঙ্গীকারনামা অনেক ক্ষেত্রে কাজে লাগে। আমরা জীবনে বিভিন্ন কাজে চুক্তি করে থাকি, অঙ্গীকারনামা সে ক্ষেত্রে সে চুক্তির লিখিত প্রমাণ হিসেবে কাজ করে। এই লিখায় মূলত অফিশিয়াল কাজে অঙ্গীকারনামা লিখার ফরম্যাট নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তবে আনঅফিসিয়াল কাজে হাতে লিখা যে অঙ্গীকারনামা লিখা তার নির্ধারিত কোন ফরম্যাট নেই।

 

আশা করি আপনারা অঙ্গীকারনামা লিখার নিয়ম ভালভাবে বুঝতে পেরেছেন, যদি কোন সমস্যা থাকে, তাহলে কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাবেন।

 

বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। লম্বা হওয়ার উপায় ও লম্বা হওয়ার ব্যায়াম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!