অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম – প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

অনেক দেশে, জন্ম নিবন্ধন একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম মাধ্যমে একটি দেশের একটি নতুন প্রাণকে তালিকাভুক্ত করা হয়। এটি বিপুল সংখ্যক দেশে শিশুদের পরিচয়ের আইনি প্রমাণ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ব্যবহৃত হয়। আজকের এই লিখায় অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হবে, যাতে করে আপনারা যারা এখন ও আপনার বাচ্চাদের জন্ম নিবন্ধন করেন নি, সহজেই এর প্রক্রিয়া বুঝতে পারেন।

 

যদি ও বাংলাদেশের মানুষ জন্ম নিবন্ধনের ওপর খুব একটা জোর দেয় না। সচেতনতার অভাবের কারণে এই বিষয়টি ঘটছে। এই সমস্যাটি সমাধান করার লক্ষ্যে ২০০৩ সালে ৩রা জুলাইকে জাতীয় জন্ম নিবন্ধন দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও বলে রাখা ভাল যে , মানুষকে তাদের সন্তানের জন্ম নিবন্ধনে উৎসাহিত করার জন্য, সরকার সন্তানের জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে যদি লোকেরা এটি করে তবে জন্ম নিবন্ধনের উপর কোনও ব্যয় আরোপ করেনি। সেই সময়ের পরেও খরচ অনেকটাই কমিয়ে আনা হয়েছে। কেউ যদি জন্ম সনদের কোনো তথ্য পরিবর্তন বা সংশোধন করতে চান, তাহলে তার খরচ মাত্র ২৫ টাকা থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত পড়বে।

 

জন্ম নিবন্ধন কি?

যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি শিশুর জন্ম রেকর্ড করা হয় তাকে বলা হয় ‘জন্ম নিবন্ধন’। এটি একটি স্থায়ী সরকারী রেকর্ড যা একটি শিশুর অস্তিত্ব প্রমাণ করে, যা সন্তানের পরিচয়কে আইনী স্বীকৃতি দেয়।

 

অন্তত, এটি একটি শিশুটি র জন্মস্থান এবং বাবা মার পরিচয়কে স্পষ্টভাবে রেকর্ড করে। জন্মের প্রশংসাপত্র পাওয়ার জন্য একটি শিশুর জন্ম নিবন্ধন করা আবশ্যক এটি তাদের প্রথম আইনী পরিচয়ের প্রমাণ। জন্ম রেকর্ড যাচাই করতে একজন ব্যক্তির “১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বর” এবং “জন্ম তারিখ” লিখতে হবে।

 

জন্ম নিবন্ধন হলো জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ২৯ নং আইন) এর আওতায় একজন মানুষের নাম, লিঙ্গ, জন্মের তারিখ ও স্থান, বাবা-মায়ের নাম, তাদের জাতীয়তা এবং স্থায়ী ঠিকানা নির্ধারিত নিবন্ধক কর্তৃক রেজিস্টারে লেখা বা কম্পিউটারে এন্ট্রি প্রদান এবং জন্ম সনদ প্রদান করা।

 

জন্ম নিবন্ধন কেন গুরুত্বপূর্ণ?

জন্ম নিবন্ধন বাংলাদেশের নাগরিকদের কেবল একটি মৌলিক মানবাধিকারই নয়, এটি শিশুদের অন্যান্য অধিকারগুলি প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে। জন্ম নিবন্ধন ছাড়া বাংলাদেশের শিশুদের জন্য কোনও আইনী কাগজ নেই। সুতরাং, তারা তাদের মৌলিক অধিকারগুলোর পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরিষেবা এবং সুবিধা থেকে যাতে বঞ্চিত না হয় তাই জরুরি ভিত্তিতে জন্ম নিবন্ধন করা উচিত।

 

জন্ম নিবন্ধন ছাড়া, বাল্যবিবাহ, অপ্রাপ্তবয়স্ক শ্রম, যৌন নিপীড়ন এবং অন্যান্য সামাজিক অপরাধ রোধ করা খুব কঠিন হয়ে যায়। আমরা প্রায়ই এমন ধরনের নিউজ দেখে থাকি যে বিদেশী মানব পাচারকারীর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া শিশুরা তাদের জাতীয়তা প্রমাণ করতে না পারায় দেশে ফিরে আসার সময় অসুবিধার মুখোমুখি হয়। তাহলে বুঝতেই পারছেন, একজন শিশুর জন্য জন্ম নিবন্ধন কতটা জরুরী।

 

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

এতক্ষন জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানলেন এখন জেনে নিন অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম।

 

বর্তমানে অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ বিষয় হওয়ায়, জন্ম নিবন্ধনপত্র থাকা আবশ্যক হয়ে উঠেছে। আমরা যদি স্কুলিংকে শুরু হিসাবে গণনা করি, তবে আমাদের জীবনের প্রথম পর্যায় থেকেই একটি জন্ম নিবন্ধন পত্র থাকা উচিত। এর পরে যতদিন না অবধি জাতীয় পরিচয়পত্র না হয় এই জন্ম নিবন্ধনই সকল দরকারি কাজে আমাদের ভরসা। এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে ও জন্ম নিবন্ধন প্রয়োজন হয়।

 

বাংলাদেশ সরকার জন্ম নিবন্ধন প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড করেছে। এখন, আপনি অনলাইনে নিবন্ধন ফর্মটি পূরণ এবং জমা দিতে পারেন। আপনাকে কেবল প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টগুলির কপি স্ক্যান করে সংযুক্ত করতে হবে। আপনি ফর্ম পূরণ করার সময় যা তথ্য দিবেন সে অনুযায়ী আপনার জন্ম নিবন্ধন পত্র তৈরি হবে। আপনার নির্দিষ্ট জন্ম নিবন্ধনের প্রশংসাপ্ত্র সংগ্রহের জন্য দরকারি কাগজপত্র অনলাইনে জমা দেওয়া ফর্মের হার্ডকপি সহ নির্দিষ্ট তারিখে আপনাকে ওয়ার্ড কমিশনার, স্থানীয় কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যানের অফিসে যেতে হবে।

 

জন্ম নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • বাংলাদেশ জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি (যদি থাকে)
  • আবেদনকারীর বাংলাদেশ পাসপোর্ট ডাটাবেস পেজের কপি।
  • পিতামাতার পাসপোর্ট ডাটাবেস পেজের অনুলিপি, যদি কোনও আবেদনকারী ছোট শিশু হয়।
  • আবেদনকারীর সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে তোলা পাসপোর্ট সাইজ (55mmx45mm) ফটো,
  • জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফর্মের মুদ্রিত কপি।
  • হংকং/ তাইওয়ান বা ম্যাকাও পরিচয় পত্রের কপি (যদি থাকে)

 

পূর্বে, বাংলাদেশের জন্ম নিবন্ধন সিস্টেমটি কিছুটা জটিল এবং সময় সাপেক্ষ ছিল। কারণ, আগে যারাই নিবন্ধন করতে হত তাদেরকে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে যেতে হত, যেমন নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা, এটি স্থানীয় রেজিস্ট্রারের কাছে জমা দেওয়া এবং তারপরে আপনার জন্ম নিবন্ধন প্রশংসাপত্র পাওয়ার জন্য কয়েক দিন অপেক্ষা করা। এগুলো আসলেই সময় সাপেক্ষ এবং কিছু টা ধীর গতির।

 

তাছাড়া আরও কিছু জটিল বিষয় বোঝা ও কঠিন ছিল, যেমনঃ রেজিস্ট্রারের পক্ষে কোনও সদৃশ বা জাল আছে কিনা তা খুঁজে বের করা কঠিন ছিল। এই সমস্যা সমাধানের জন্য, বাংলাদেশ সরকার এই ব্যবস্থাটি ২০১০ সালের অক্টোবরে চালু করে, যাতে আপনি অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে পারেন। হংকং, তাইওয়ান ও ম্যাকাওতে বসবাসরত বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীরাও বাংলাদেশে জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

 

বাংলাদেশ জন্মসনদ সংশোধনের জন্য আবেদন:করার নিয়ম

আপনি যদি আপনার জন্ম সনদ পাওয়ার পরে দেখেন সেখানে ভুল তথ্য আছে তাহলে আপনাকে সংশোধনের জন্য আবেদন করতে হবে। জন্ম বা মৃত্যুর সনদ সংশোধন করার জন্য, আবেদনকারীদের সংশোধন ফর্ম পূরণ করার জন্য রেজিস্টার জেনারেল বা সমতুল্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

 

কিভাবে অনলাইনে জন্মসনদ সংগ্রহ করবেন?

সরকার ৪০ দিনের মধ্যে সদ্যোজাত শিশুদের জন্য জনমো নিবন্দন সন্দ সংগ্রহ করার জন্য অভিভাবকদের নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেটের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন অভিভাবকরা। বাংলাদেশ সরকার নবজাত শিশুদের জন্য জন্ম নিবন্ধনের সনদ প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। অনলাইন জন্ম নিবন্ধন আবেদন ফরম. আবেদনকারীদের শিশুদের হাসপাতালের রিলিজ লেটার বা জন্মের সনদ জমা দিতে হবে। আবেদনকারীরা জন্ম সনদের পিডিএফ ডাউনলোড করতে পারেন এবং এটি যে কোনও প্রিন্টার থেকে প্রিন্ট আউট করিয়ে নিতে পারেন।

 

জন্ম নিবন্ধনের সকল সরকারী লিংক

  • আপনি যদি নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে চান তাহলে এই লিংকে যেতে হবে : http://bdris.gov.bd/br/application
  • আপনি জন্ম নিবন্ধন তথ্য সংশোধন করার জন্য আবেদন করতে হলে তাহলে এই লিংকে যেতে হবে: http://bdris.gov.bd/br/correction
  • আপনি যদি জন্ম নিবন্ধন তথ্য অনুসন্ধান করতে চান তাহলে এই লিংকে যেতে হবে: http://bdris.gov.bd/br/search
  • জন্ম নিবন্ধন আবেদনের বর্তমান অবস্থা জানতে হলে এই লিংকে যেতে হবে: http://bdris.gov.bd/br/application/status
  • জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করতে হলে এই লিংকে যেতে হবে: http://bdris.gov.bd/application/print
  • জন্ম নিবন্ধন সনদ পুনঃ মুদ্রন করতে হলে এই লিংকে যেতে হবে: http://bdris.gov.bd/br/reprint

 

জন্ম নিবন্ধন অনলাইন যাচাইকরণ:

পাসপোর্ট আবেদনের জন্য ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট এখন অপরিহার্য। তারা অনলাইনে জন্মসনদ পরীক্ষা করে। বাবামায়েরাও অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন নম্বর চেক আপ করতে পারেন। অনলাইনে অনলাইন জন্ম নিবন্ধন তথ্য যাচাই.করে জন্মসনদ পরীক্ষা করা খুব সহজ। অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন নম্বর না পেলে সিটি করপোরেশন থেকে ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট সংগ্রহ করতে হবে। প্রতিটি আবেদনের জন্য ডিজিটাল বার্থ সার্টিফিকেট আবেদন ফি ১০০/= টাকা।

 

কিভাবে অনলাইন জন্মসনদ বাংলাদেশে চেক করবেন?

নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি অনলাইন বার্থ সার্টিফিকেট বাংলাদেশ চেক করতে পারেন। সুতরাং আসুন আমরা এখানে অনলাইন জন্ম সনদ চেক করার প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করি:

 

  • প্রথমত, আপনাকে অফিসিয়াল ওয়েবসাইট bdris.gov.bd বা এখানে প্রদত্ত লিঙ্কটি everify.bdris.gov.bd দেখতে হবে।
  • সেখানে যাওয়ার পরে, আপনাকে প্রথম বক্সে আপনার ১৭ সংখ্যার জন্ম নিবন্ধন নম্বরটি দিতে হবে।
  • তারপরে আপনাকে পরবর্তী বক্সে আপনার জন্ম তারিখ লিখতে হবে।
  • এরপর সার্চ অপশনে ক্লিক করতে হবে।
  • অবশেষে, আপনি আপনার অনলাইন জন্ম সনদ চেক করতে পারবেন।

 

শেষ কথা

আশা করি, আজকেই এই লিখা পড়ে আপনারা অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন, তাহলে দেরি না করে আজকেই অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে ফেলুন।

 

বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার জন্য আমাদের ওয়েবসাইটে সাথেই থাকুন। ড্রাইভিং লাইসেন্স করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আমাদের এইখানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!